স্ত্রী ও ছেলের হাতে নিহত ইব্রাহিমের ভাই পুলিশের দেয়া চার্জশিটে সন্তুষ্ট নন। তিনি চান সিআইডি বা পিআইডির মাধ্যমে পুনঃতদন্ত। কক্সবাজার জেলায় সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকান্ডটি সংগঠিত হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে পেকুয়ার মগনামার ৫নং ওয়ার্ডের দরদরিয়া ঘোনা গ্রামে। ছেলে এবং স্ত্রীর এলোপাতাড়ি দায়ের কোপে নিহত হন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইব্রাহিম (৫০)।
মামলার বাদী ও প্রধান সাক্ষী নিহতের ছোট ভাই আজম খলিল জানান, ভাই হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে তিনি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হত্যা মামলার বাদী হতে গিয়ে পড়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালীদের রোষানলে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টায় ইব্রাহিম ঘুম থেকে উঠে পেকুয়া বাজারে তার হার্ডওয়্যার দোকানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইব্রাহিমকে স্ত্রী ভেলুয়া বেগম ও ছেলে ইসমাইল মিলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে টেলিফোনে চট্টগ্রাম থেকে মা ও ভাইকে মারার কথা বলছিলেন মেজো মেয়ে এস্তেফা বেগম।
কোপানোর জন্য দা এনে ভেলুয়ার হাতে দেয় তার মামাত বোন। ওই দা দিয়ে স্বামী ইব্রাহিমের মাথায় সজোরে কোপ দেয়, এর পর ছেলে ইসমাইল এসে দা দিয়ে আবারো তার বাবাকে কোপাতে থাকে। চিৎকার শুনে ভাই আজম খলিল ও স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় পেকুয়া বাজারের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সেখানে টানা ১১ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে ১০ অক্টোবর মারা যান ইব্রাহিম। গত বছরের ৫ অক্টোবর ইব্রাহিম বাদী হয়ে ছেলে ইসমাইল ও স্ত্রী ভেলুয়াসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে একটি এজাহার প্রেরণ করেন ভাই আজম খলিল মারফত। মৃত্যুর আগে কে কীভাবে তাকে কুপিয়েছে, কে দা এনে দিয়েছে এবং কে টেলিফোনে তাকে মারার নির্দেশ দিয়েছে সব বলে গেছেন ইব্রাহিম।
বাদী মারা গেলে আজম খলিল বাদী হয়ে মামলা পরিচালনা করার জন্য থানায় লিখিতভাবে জানান। এ সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা এ হাসেম, আজম খলিলকে আদালতের শরণাপন্ন হতে বলেন। যথারীতি তিনি আদালতের মাধ্যমে ভাই হত্যা মামলার ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাদী পরিবর্তনের আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন গ্রহণ করেন। চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে সিআইডি বা পিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়ার জন্য গত ১১ এপ্রিল আবেদন করেন আজম খলিল।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এএসপি (সার্কেল) চকরিয়াকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। বিষয়টি জেনে ও এই আদেশের এক মাস পর অর্থাৎ মে মাসে তড়িঘড়ি করে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে নিহত ইব্রাহিমের স্ত্রী ভেলুয়া বেগম ও ছেলে ইসমাইলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয় সাদিয়া ও ইব্রাহিমের আরেক মেয়ে এস্তেফা বেগমকে। মামলা পুনরায় সিআইডি বা পিআইডির মাধ্যমে তদন্তসাপেক্ষে চার্জশিট দেয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহত ইব্রাহিমের ছোট ভাই আজম খলিল।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ হাসেম বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই যথাসময়ে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমি কোনোরকম অনিয়ম বা ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য