ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহরের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় শত বছরের পুরোনো। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে রয়েছে স্কুলটি। স্কুল মাঠেই দাঁড়িয়ে পরিত্যক্ত দ্বিতল ভবন।
এটি ২০ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। টয়লেট ও প্রস্রাব-পায়খানা অরক্ষিত স্থানে। সেখানে শিক্ষার্থীরা যেতে ভয় পায়। টয়লেট এলাকায় মাদকসেবীদের আনাগোনা। ছুটির পর থেকে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে স্কুলজুড়ে। স্কুল মাঠ থেকে পরিত্যক্ত ভবন এবং টয়লেট সরানোর দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
মুক্তাগাছা উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে ১৯৪০ সালে মাত্র ১৭ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠে পৌর কেন্দ্রীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর পাশেই ছিল পৌর কমিউনিটি সেন্টার। ১৯৭৮ সালে ২৭ শতাংশ জমির ওপর সরকারি অর্থায়নে পৌর কমিউনিটি সেন্টারটি গড়ে তোলা হয়। কমিউনিটি সেন্টারের বিশাল একটি ভবনে সেমিনার, সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হতো।
ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ১৯৯৩ সালের দিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটি দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়। কমিউনিটি সেন্টারের হলরুম ভেঙে নেয়া হলেও সামনের অফিসের অংশটুকু এখনো ভাঙা হয়নি। ভবনের ইট ও খোয়া খসে খসে পড়ছে। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে। এভাবে ঝুঁঁকিপূর্ণ ভবনটি প্রায় ২০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ঘেঁষে বসানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন খেলার ডায়েস।
অভিভাবকদের জন্য বানানো হয়েছে বসার ছাউনি। স্কুলে শিক্ষার্থী রয়েছে ৫০১ জন। এ বিশাল শিক্ষার্থীদের জন্য নেই প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ। যে কারণে পরিত্যক্ত ভবন ঘেঁষেই শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে থাকে। অনেক সময় ওই পরিত্যক্ত ভবনের ভেতরে খেলাধুলা করে শিক্ষার্থীরা। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বারবার পৌর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও ভবনটি অপসারণের উদ্যোগ নেই।
শিক্ষার্থীদের প্রস্রাব-পায়খানা নিয়ে রয়েছে বড় সমস্যা। স্কুলের মূল ভবনের সামনে রয়েছে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের অফিস। টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে স্কুলের ভবন আর রিসোর্স সেন্টারের এক কোণে। যেখানে শিক্ষার্থীরা যেতে ভয় পায়। আর রিসোর্স সেন্টারের পেছনে ও পরিত্যক্ত ভবনের ভেতরে সার্বক্ষণিক মাদকসেবীদের আনাগোনা থাকে। ছুটির পর স্কুলের পুরো অংশে বসে মাদকসেবকদের আড্ডা। স্কুলের দেয়াল টপকে ঢুকে পড়ছে মাদকসেবীরা।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, স্কুলের লেখাপড়ার সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে মুক্তাগাছাজুড়ে। কিন্তু এ স্কুলে সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে পায়খানা-প্রস্রাবের জায়গা নিয়ে। সেখানে শিক্ষার্থীরা যেতে ভয় পায়।
প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক জানান, স্কুলের প্রয়োজনীয় মাঠ না থাকায় পরিত্যক্ত পৌর কমিউনিটি ভবন ঘেঁষে খেলাধুলার বিভিন্ন ডায়েস বসানো হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে অভিভাবকদের বসার ঘর। কিন্তু তাদের সারাক্ষণ ভয়ে থাকতে হয় পরিত্যক্ত ভবনটি নিয়ে। ওই পরিত্যক্ত ভবনে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা।
পৌর কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাকের ভাষ্য, স্কুলের মাঠ ঘেঁষে রয়েছে পরিত্যক্ত একটি ভবন। এটি অপসারণের বিষয়ে পৌরসভার মাসিক সভায় তোলা হবে। এ ছাড়া স্কুলজুড়ে যেভাবে মাদকের আখড়া দেখা দিয়েছে, এটি দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
মুক্তাগাছা থানার ওসি আব্দুল মজিদ বলেন, স্কুল মাঠে মাদকসেবীদের আর আড্ডাখানা বসবে না। এখন থেকে নিয়মিত ওই এলাকায় অভিযান চালানো হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য