-->
শিরোনাম

নানা সমস্যায় হুমকির মুখে কয়লা ব্যবসা

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
নানা সমস্যায় হুমকির মুখে কয়লা ব্যবসা
ভৈরবে কয়লার মোকামে কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নানা সমস্যায় হুমকির মুখে কয়লা ব্যবসা। কয়লা মজুত রাখা, মাল লোড-আনলোড, হয়রানি ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সমস্যায় এ ব্যবসা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। কয়লা ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়বে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৮ হাজার লোক।

 

তাছাড়া বিআইডব্লিউ কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে ব্যবসায়ীরা। তাই সমস্যা সমাধানে ব্যবসাটি টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

ভৈরবে মেঘনা নদীর পাড়ে কয়লার মোকাম। মোকামের ৬০০ গজের মধ্যে সরকারের তিন মন্ত্রণালয়ের পৃথক চার ইজারাদারের মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে টোল। এতে সরকারের রাজস্ব বেড়েছে। তবে বড় ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন কয়লা ব্যবসায়ীরা। চলতি বছর বাংলাদেশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিআইডব্লিউএ কর্তৃপক্ষ ঘাট সম্প্রসারণ করে ইজারা মূল্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। প্রতিকার পেতে কয়লা ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে নামেন।

 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভৈরব নদীবন্দর ও বাণিজ্য শহর। ব্রিটিশ আমল থেকে নদীপথকে কেন্দ্র করে ভৈরবে ব্যবসার প্রসার ঘটে। বর্তমানে নদীপথের গুরুত্ব কমে গেলেও শেষ হয়নি। ভৈরবে কয়লার মোকামের বিস্তৃতি নদীকে ঘিরেই।

 

২০০২ সালে বন্দর নগরী ভৈরবের পুরাতন ফেরিঘাটে গড়ে ওঠে কয়লা ব্যবসা। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকা থেকে জাহাজে করে পুরাতন ফেরিঘাটে নোঙর করে কয়লাবাহী জাহাজ। এসব জাহাজ থেকে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় এখানকার কয়লা সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতিদিন ৮০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকার কয়লা বিক্রি হয়। সরকারও মোটা অঙ্কের রাজস্ব পাচ্ছে।

 

কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ায় এ পেশায় ৮ হাজার লোক জড়িত রয়েছে। কিন্তু জাহাজে আসা পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লা ডাম্পিং করার জায়গা না থাকায় বিপত্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

শুধু তাই নয়, এ ঘাটে ব্যবসা করার জন্য রেলওয়ে মুরিং ঘাট, খেয়া ঘাট,উপজেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএসহ ৪টি সংস্থার কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ব্যবসা করতে হয়। এতে ব্যবসাযীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে।

 

এছাড়া ঘাটে নোঙর করা জাহাজ থেকে মাল খালাস, ট্রাক হ্যান্ডিলিংয়ে বিআইডব্লিউটিএ এর উপপরিচালক রেজাউল করিম নানাভাবে হয়রানিসহ চাঁদা দাবি করায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

মোকামে গিয়ে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের ইজারাস্থল জেটি এলাকায়। রেলপথ মন্ত্রণালয় ইজারা দিয়েছে মুড়িং ঘাট। এর মধ্যে দেড়গজ এলাকা নিয়ে পৃথক ইজারা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন। চারটি ইজারাঘাট নিয়ন্ত্রণ করছেন কয়লা ব্যবসায়ীরা। মূলত মোকামের নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং ব্যবসায়ীদের স্বল্প মাশুলে ঘাট ব্যবহারের সুযোগ দিতে কয়লা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির মাধ্যমে ইজারা নেয়া হচ্ছে।

 

ভৈরব মেঘনা ফেরিঘাট কয়লা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি সাজ্জাদ ইবনে সোলায়মান বলেন, কয়লার জন্য ভৈরব মোকামের পরিচিতি এখন দেশজুড়ে। বছরে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় এই মোকামে। অথচ ৬০০ গজের মধ্যে চারটি জায়গা ইজারা দিয়ে এক মুরগি চারবার জবাই করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।

 

ভৈরব কয়লা ব্যবসা সমবায় সমিতির সহসভাপতি বাদল মিয়া বলেন, বছরে এক হাজার কোটি টাকার অধিক লেনদেন থেকে সরকার অনেক টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। আবার চারটি ঘাট ব্যবহার করতে গিয়ে দিতে হচ্ছে রাজস্ব। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তার অনৈতিক আর্থিক চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। কেউ কেউ চাঁদা দাবি করে বসেন। এত চাহিদা পূরণ করে ব্যবসা করা কঠিন।

 

জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের ইজারা এলাকা ৫০ গজ। কর্তৃপক্ষের অধীন একটি বড় জেটি রয়েছে। ২০২০ সাল থেকে কর্তৃপক্ষ ইজারা এলাকা বাড়িয়ে ৫০০ গজে সম্প্রসারণ করে। এতে দুই লাখ টাকার ইজারা মূল্য ২০ লাখের ওপরে গিয়ে ঠেকে। ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের দাবি, পুরো এলাকা একটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে যেন ইজারা দেয়া হয় এবং ইজারামূল্য যেন সহনীয় মাত্রায় রাখা হয়।

 

ইস্যুটি নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। কিন্তু সুফল আসছে না। গত মঙ্গলবার সকালে মোকাম এলাকায় দাবির পক্ষে মানববন্ধন করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে সমাবেশ করার কথা রয়েছে।

 

সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কয়লা মোকামের সঙ্গে অসংখ্য মানুষের জীবিকা জড়িত। পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিকের ঘরে খাবার যায় এই মোকামের কল্যাণে। আশা করি, রাজস্ব বাড়ানোর কথা বলে সম্ভাবনাময় ব্যবসাটির গতি থামিয়ে দেয়া হবে না।

 

এ বিষয়ে কথা হয় আশুগঞ্জ ও ভৈরব বাজার নদী বন্দরের উপপরিচালক রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সীমানা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। ভৈরব এখন বন্দর। বন্দরের কারণে ব্যবসায়ীদের সুযোগসুবিধা বেড়েছে। বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version