-->
শিরোনাম
জলবায়ু পরিবর্তন

অস্তিত্ব সংকটে সুন্দরবন অঞ্চলের ২২ নদী

খুলনা ব্যুরো
অস্তিত্ব সংকটে সুন্দরবন অঞ্চলের ২২ নদী
পলি পড়ে শীর্ণ হচ্ছে খুলনার ভদ্রা নদী। সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছে জনসাধারণ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তিলে-তিলে পলি পড়ে মরে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন অঞ্চলের ২২ নদী।

 

এগুলো হচ্ছে মোংলা, পুটিমারী, বিষণা, দাউদখালী, ভোলা, ঘষিয়াখালী, কালিগঞ্চ-খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, বলেশ্বর, ভৈরব, তালেশ্বর, বেমরতা, দোয়ানিয়া, কুচিবগা, ছবেকী, রাওতি, বেতিবুনিয়া, কলমী, দোয়ানিয়া, যুগীখালী, কুমারখালী, কালীগঙ্গা ও চিত্রানদী। এগুলো এক সময় ছিল প্রমত্তা নদী।

 

জানা গেছে, বাগেরহাট জেলায় প্রায় তিন শতাধিক ছোট-বড় নদী ও খাল রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে ২২টি নদী। ৯টি উপজেলার বুক চিরে বহমান এসব নদীতে এক সময়ে লঞ্চ-স্টিমার ও কার্গো ভ্যাসেল চলাচল করত। এখন তা শুধু স্মৃতি হয়ে রয়েছে নতুন প্রজন্মের কাছে। এ নদীগুলোর অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, ভাটার সময় নদীতে হাঁটু পানিও থাকে না।

 

শুকিয়ে যাওয়া এসব নদী দেখে এই জনপদের মানুষ এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। আর স্মরণ করছে নিকট অতীতকে। এসব নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে একদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবন্দর মংলার সাথে সারা দেশের সহজে কার্গো ভ্যাসেলসহ নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

 

এ ছাড়া ঢাকা-খুলনা স্টিমার ও ঢাকা-বাগেরহাট লঞ্চ সার্ভিসও বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে নদী-খাল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কৃষকরা চাষাবাদ করতে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় প্রতি বছরই কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে।

 

এ এলাকার লাখ লাখ হেক্টর ফসলি জমি ও খালে বেড়িবাঁধ দিয়ে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের ফলে ফসলি জমিতে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি না উঠতে পারা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়াপদা) ৫টি পোল্ডারের ১৬৫টি স্লুইস গেটে সরকারিভাবে কোনো লোকবল নিয়োগ না থাকায় ভাটার পানি নামার সময় ফ্লাপগেটগুলো সব সময় বন্ধ থাকছে।

 

ফারাক্কা বাঁধের কারণে এসব নদীতে উজানের পানি না আসার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে জোয়ারের পানি স্থির হয়ে থাকায় অতিরিক্ত পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদী-খাল। এ ছাড়া সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ভাটার সময় দ্রুত নেমে যেতে না পারায় ফসলি জমিতে মাত্রাতিক্ত লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি। মরে শুকিয়ে যাচ্ছে সবুজ প্রকৃতি।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে সাড়ে ৭শ’ নদী।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বহুসংখ্যক নদী শীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য ফারাক্কা অবশ্যই দায়ী, তবে দেশের জনগণও কম দায়ী নয়। প্রভাবশালীরা অনেক নদী ভরাট করে দিচ্ছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে জানান, বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনার সমস্যা শুধু টেকনিক্যাল সমস্যা নয়।

 

এটা একটা রাজনৈতিক সমস্যা। এর সাথে জড়িত ভারত, চীন, নেপালসহ বেশকিছু দেশ। এসব দেশের সাথে আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্কেও উন্নয়ন করে সুষ্ঠু পানি বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে দেশের জনগণকেও নদীবান্ধব মানসিকতা সম্পন্ন হতে হবে।

 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার বিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুল আলম এ প্রতিবেদককে জানান, খুলনাসহ সারা দেশে অসংখ্য নদী এখন মরা খাল। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধানত ফারাক্কা বাঁধ, প্রভাবশালীদের নদী দখল করে বাঁধ নির্মাণ করা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি।

 

তিনি জানান, ঘষিয়াখালী চ্যানেলসহ এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি নদী ইতোমধ্যে খননের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরো কয়েকটি নদী খননের কাজ প্রক্রিয়াধীন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version