ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি আগ্রহ ছিল অনেক। আত্মীয়-স্বজন বা পাড়া প্রতিবেশীর কোনো অনুষ্ঠান হলেই নিজ উদ্যোগেই ছুটে গিয়ে রান্না করতেন। সেই শখের রান্নাই এক দিন মাদারীপুর শহরের কুকরাইল এলাকার রেবেকা সুলতানা বলাকার আয়ের মাধ্যম হবে, তা কোনোদিন তিনি ভাবেননি। প্রথম বিক্রি তার মাত্র ৯০ টাকা হলেও আজ প্রতিমাসে তার রান্না করা খাবার বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। সংসারের অর্ধেক খরচ মেটান এই রান্নার খাবার বিক্রির আয়ের টাকা থেকে।
জানা যায়, মাদারীপুর শহরের কুকরাইল এলাকার আ. গফুর বেপারীর মেয়ে রেবেকা সুলতানা বলাকা। তিনি আট ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। খুব ডানপিটে স্বভাবের ও ছোটবেলা থেকেই রান্না করার শখ ছিল। ১৯৮৮ সালে বাবা মারা যান। এরপর তার বড় ভাই ব্যবসায়ী ও একটি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেনের ঢাকার বাসায় মা মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে চলে যান বলাকা। সে সময় তার ভাই ছিলেন অবিবাহিত।
তাই রান্নার কাজটা তার মাকেই করতে হতো। বলাকা তার মার রান্না দেখে দেখে রান্নার কৌশল শিখে ফেলেছিলেন। তাছাড়া তার ভাই ছিলেন ভোজনরসিক। তাই প্রতিদিনই নিত্যনতুন মজাদার খাবার রান্না করতে হতো। এভাবেই কয়েক বছর যাওয়ার পর ২০০০ সালে বলাকার বিয়ে হয় মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের কলাবাড়ি এলাকার এস এম বিপু হকের সঙ্গে। সে সময় তাজন নেছা কল্লোল শিশু বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার জন্য শহরের কুকরাইল এলাকার বাসায় থাকা শুরু করে তার পরিবার।
একটি এনজিওতে চাকরি করতেন স্বামী এস এম বিপু হক। হঠাৎ করে প্রজেক্ট বন্ধ হওয়ায় তার কাজও বন্ধ হয়ে যায়। তখন ২০২০ সালে মাদারীপুরের আছমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালের স্টোর কিপারের চাকরি হয় রেবেকা সুলতানা বলাকার। কিন্তু এই চাকরিতে তিন ছেলের পড়াশোনাসহ সংসারের খরচ জোগাতে কষ্টকর হয়ে পড়ে। তখন তার সহকর্মীদের কথামতো ফেসবুক পেজে বলাকা’স ফুট কর্নার নামে একটি পেজ খুলে প্রথমে খিচুড়ি, ডিম ও ভর্তার ছবি তুলে পোস্ট করেন। সেই দিন মাত্র ৯০ টাকায় বিক্রি হয় সেই খাবার। এরপর আস্তে আস্তে নানা ধরনের খাবারের ছবি ও ভিডিও পোস্ট দেয়া শুরু করেন।
শুরু হয় তার খাবার বিক্রির কার্যক্রম। ঘরোয়া পরিবেশে মজাদার বিভিন্ন খাবার পাওয়া যাওয়ায় দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বাড়ে। প্রথম দিকে অল্প বিক্রি হলেও আস্তে আস্তে বেড়ে যায়। বর্তমানে প্রতিমাসে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার খাবার বিক্রি করছেন রাঁধুনীশিল্পী এই বলাকা। আর সেই খাবার ডেলিভারি দেন তার স্বামী এস এম বিপু হক ও প্যাকেটে সহযোগিতা করেন তার দুই ছেলে। সঙ্গে একজন রান্নার সহযোগীকে নিয়ে তিনি একাই সব রান্না করেন। তবে ঘরোয়া পরিবেশে ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার রান্নার এই ব্যাপারটি আরো বেশি প্রচার হলে বাড়বে তার বিক্রির পরিধি।
রেবেকা সুলতানা বলাকা বলেন, কখনো ভাবিনি এভাবে রান্না দিয়ে আয় করতে পারব। আমি প্রায় আমার অফিসের স্টাফদের জন্য বিভিন্ন আইটেম রান্না করে নিয়ে যেতাম। তারা খেয়ে খুব প্রশংসা করতেন। তাই আমার অফিসের ম্যানেজার ম্যাম ও কম্পিউটার সেকশনের কাজ করা আমার সহকর্মীর আগ্রহে অনলাইনে পেজ খুলে বিভিন্ন আইটেম পোস্ট করা শুরু করি। প্রথম দিন মাত্র ৯০ টাকায় বেচা শুরু হলেও এখন মাসে ৫০ হাজারের বেশি বিক্রি করছি। এ কাজে আমার স্বামী ও ছেলেরা আমাকে খুব সহযোগিতা করছেন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য