-->
সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ আইসক্রিম কারখানা

মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম (কুমিল্লা)
যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ আইসক্রিম কারখানা
অবৈধ কারখানায় প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে এসব বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত আইসক্রিম

এদের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই, তবুও তারা শিল্পপতির ভূমিকায়। অথচ সরকার প্রতিবছর হারাচ্ছে কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব।

 

কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক আইসক্রিম ও বরফ তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় নোংরা পরিবেশ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে হরেকরকম ব্র্যান্ডের আইসক্রিম। ফলে এসব নিম্নমান ও ভেজাল আইসক্রিম খেয়ে ৫ উপজেলার হাজার হাজার শিশু-কিশোর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্রগুলো জানায়, উপজেলা ৫টির বিভিন্ন হাট বাজারে স্থাপিত প্রায় শতাধিক আইসক্রিম ও বরফ তৈরির কারখানার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। বিশেষ করে পরিবেশ, বিএসটিআই, যুব মন্ত্রণালয়, ফায়ার ব্রিগেড, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের কোনো প্রত্যয়নপত্র নেই।

 

অথচ এসব অবৈধ কারখানায় প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নোংরা পরিবেশে ও বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত আইসক্রিম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এ ব্যবসা আরো জমজমাট হয়ে উঠেছে। আসন্ন বর্ষাকালে তেমন বৃষ্টিপাত, পানি না হলেও ঋতু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির মধূমাস জ্যৈষ্ঠ মাসে তাপদাহ ও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে এ অঞ্চলের হাজার হাজার শিশু-কিশোর খাচ্ছে ওইসব কারখানায় তৈরি প্রিয় পানীয় আইসক্রিম।

 

এসব আইসক্রিম তৈরিতে কারখানাগুলোর পানির হাউসে শেওলা, আর্সেনিক যুক্ত, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ধূলাবালু যুক্ত, চিনির পরিবর্তে সেকারিন, দুধের বিপরীতে বিষাক্ত রাসায়নিক পাউডার, নারিকেলের পরিবর্তে দানাযুক্ত সাদা ভূষি, আটা-ময়দা, কালার রংসহ বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে কোনো আইসক্রিম তৈরি কারখানায় অভিজ্ঞ কেমিস্ট কিংবা দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই।

 

পানি শোধনাগার, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরঞ্জাম ও মলযুক্ত লাইন কিংবা আর্সেনিকমুক্ত কোনো বিজ্ঞানাগার নেই। এসব কারখানায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি যা শ্রম আইনের পরিপন্থি। তাদের কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা পরীক্ষিত কোনো পোশাক কিংবা সরঞ্জাম দেয় না মালিক পক্ষ।

 

স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ অনুসারে, এ অঞ্চলের প্রায় ৯৮ ভাগ টিউবওয়েল আর্সেনিকযুক্ত এবং ৫৬ ভাগ টিউবওয়েল মলযুক্ত। এ পর্যন্ত লাকসামে সাড়ে ৫ হাজার ও মনোহরগঞ্জে প্রায় ৪ হাজার, মনোহরগঞ্জে ৪ হাজার ২শ, লালমাই উপজেলায় ২ হাজার ৮১৯, বরুড়ায় ৩ হাজার ৯৭১ ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় ৫ হাজার ২৬১ জন আর্সেনিক রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

 

তাদের মতে, ৫টি উপজেলার প্রায় ১১৭টি গ্রাম আর্সেনিকের কবলে পড়লেও ২৮টি গ্রাম রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। সব আইসক্রিম তৈরি কারখানায় একই চিত্র। এলাকার বিভিন্ন হাটবাজার, আবাসিক কলোনি ও স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা গেটে আইসক্রিম বিক্রি করছে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। প্রতিদিন শত শত ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা বিভিন্ন যানবাহনে এসব নিম্ন মানের আইসক্রিম বিক্রি করছে।

 

আবার মালিকপক্ষ মার্কেটিং হিসেবে খুচরা বিক্রির পাশাপাশি পাইকারিতে বিভিন্ন খাবার, ফাস্টফুড ও কনফেকশনারি দোকানে বিক্রি করছে মরণঘাতক এ আইসক্রিম।

 

এ ব্যাপারে ৫টি উপজেলার স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশবিদ, বিএসটিআই, শ্রম দপ্তর, ফায়ার ব্রিগেড ও স্বাস্থ্য বিভাগ কর্মকর্তারা জানান, আমরা রাজনৈতিকভাবে চাপে আছি। ওইসব আইসক্রিম কারখানার মালিককরা স্থানীয় ও প্রভাবশালী। বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে বিভিন্ন মাধ্যমে অবগত আছি। বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।

 

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version