-->
শিরোনাম
অপরিকল্পিত নগরায়ণ

দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন সড়কে দিনভর লেগে থাকে যানজট, জনভোগান্তি চরমে

আব্দুস সালাম, দিনাজপুর
দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন সড়কে দিনভর লেগে থাকে যানজট, জনভোগান্তি চরমে
দিনাজপুর শহরের সব সড়কে দিনভর এভাবেই লেগে থাকে যানজট

ঐহিত্যমন্ডিত প্রাচীন শহর দিনাজপুর জেলা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও দিনাজপুরের সড়কগুলো রয়েছে হকার এবং ফলব্যবসায়ীদের দখলে। যেন দর্শকের ভূমিকায় প্রশাসন। নাগরিক ভোগান্তি হলেও যেন দেখার কেউ নেই। অপরদিকে দিনাজপুর পৌরসভা রয়েছে নির্বিকার। সকাল হলেই দিনাজপুর শহরস্থ বাহাদুর বাজারের সড়কপথে সাধারণ মানুষেরা পারাপার করতে পারে না।

 

দীর্ঘদিন ধরে মাছের ছোট ছোট পিকআপ ভ্যান মাছ নিয়ে এসে সড়কে ভিড় জমায়। চলে পাম্প নিয়ে মাছ বাঁচানোর কাজ। পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে স্যাঁতসেঁতে। পথচারীরা ঠিকমতো হেঁটে যেতে পারে না। মুরগি ব্যবসায়ীরাও পিছিয়ে নেই। মুরগি বাজারের ভেতরে যাওয়া পর্যন্ত তাদেরও পিকআপ ভ্যান সড়ক-রাস্তার ওপর চলে মুরগি নামানোর কাজ। এখানেই শেষ নয়।

 

সারাদিনের মুরগির যাবতীয় বর্জ্য ফেলা হয় বাহাদুর বাজারের প্রধান সড়কে। দিনাজপুর পৌরসভা মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনিও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পৌরসভাধীন সাধারণ নাগরিকদের প্রশ্ন এ সমস্যার সমাধান দেবে কে? মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত হলেও সেটিও এ বছর আর দেখা যায়নি।

 

অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ঘিঞ্জি শহরে রূপ নিয়েছে দিনাজপুর। বাসিন্দারাও দিনাজপুর পৌরসভার নিয়ম ভেঙে নানা স্থাপনা করছেন। স্টেশন রোড থেকে শুরু করে বাহাদুর বাজার, দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন সড়কে দিনভর লেগে থাকে যানজট। ছোট ছোট যানবাহনের চাপে দিনাজপুর শহরের প্রধান সড়কগুলোয় যানজট লেগেই থাকে। এর ওপর সরু সড়ক ও ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে থাকায় পথচলাই দায় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনাজপুরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

 

এদিকে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে দিনাজপুর এখন ঘিঞ্জি শহরে রূপ নিয়েছে। কোথাও বাসিন্দারা, কোথাও খোদ দিনাজপুর পৌরসভা নিয়ম ভেঙে নানা স্থাপনা করছে। হয়নি সুয়ারেজ ব্যবস্থাও। এ অবস্থায় পৌরসভা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন উন্নীত হওয়ার এক দশকেও নিয়ম মেনে এগোতে পারেনি দিনাজপুর শহর।

 

ইউনির্ভাসাল ফাউন্ডেশনের মহাসচিব হালিমা বেগম সাদিয়া বলেন, পুরো শহর ঘিঞ্জি পরিবেশে গড়ে উঠেছে। কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এগুলো রোধ করা হয়নি। এখানে কোনো নিয়ম মানা হয় না। যে কারণে অনিয়মের মধ্যেই সবকিছু হচ্ছে।

 

যানবাহন ও যানজট দুইই বেড়েছে

 

২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি তৃতীয় মেয়াদে বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে জয়ী হন। তখন তিনি ২৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এর মধ্যে প্রথম দফা ছিল শহরের যানজট নিরসন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যানজট নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। এতে শহরের ১২টি ওয়ার্ডের ৫৫ কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

 

সকালে টানা দুই ঘণ্টা এই প্রতিবেদক শহরের অন্তত ৬টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান করে দেখতে পান, শহরের বাহাদুর বাজার এক পাশ ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে। লিলিমোড়, জেলরোড ঘিরে যানজট তার চিরচেনা রূপেই আছে। লিলিমোড়, সদর হাসপাতাল মোড়, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড চারদিকের যানবাহনের চাপ ও ইপিজেডের ভারী বাহনের কারণে দিনাজপুরবাসীকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেল। সুইহারি বাস টার্মিনালে বাস না ঢুকে সড়কের মধ্যে থেকেই যাত্রী উঠানো-নামানো করে। গুলশান, মর্ডানমোড়, মাহদহপট্টি, পাহাড়পুর, কোতোয়ালি থানা মোড়ের সামনে ও সুইহারী বাজারে ভয়াবহ যানজট লেগে আছে।

 

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর শহরে অটো ইজিবাইক নিবন্ধন করা সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। ব্যাটারিচালিত রিকশার কোনো নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনের বাইরে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশাও। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ইজিবাইক, অটো রিকশাভাড়া নির্ধারণ করা হয় হয়নি। ফলে যাত্রীদের সাথে প্রায় ঝগড়া বেধে যায়।

 

কথা হয় দুপুরে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যানজট নিরসন করতে গেলে বহু লোক বেকার হয়ে যাবে। এতে ছোট ছোট যানবাহন নিয়ে সড়কে নামা বাহনের চালকেরা কর্মহীন হয়ে পড়বে। এরপরও আমরা যানজট নিরসনের চেষ্টা করছি। আমরা চাই সকালে অর্ধেক বাহন চলুক, বিকেলে বাকি অর্ধেক।’

 

দিনাজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র দুলাল বলেন, পৌরসভায় নিবন্ধিত পায়েচালিত রিকশা আছে ৫ হাজার ২০১টি। এর বাইরে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করে। অন্তত ৩৫ হাজারের মতো ইজিবাইক আছে।

 

এদিকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) দিনাজপুর সূত্রে জানা গেছে, গোটা জেলায় ৩০ হাজারের চেয়ে বেশি ইজিবাইক-অটোরিকশা আছে। এর মধ্যে দিনাজপুর শহরে হাজারের মতো ইজিবাইক-রিকশা রয়েছে। এর বাইরে নিবন্ধন ছাড়াও চলে।

 

দিনাজপুর শহরের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে বেশির ভাগ ফুটপাতই ব্যবসায়ীদের দখলে। তাদের মধ্যে মাঝারি, এমনকি বড় ব্যবসায়ীও আছেন। তার ওপর ভ্যানগাড়িতে পণ্য বিক্রির কারণে শহরে হাঁটার পথও সংকুচিত হয়ে এসেছে।

 

শহরের পুলহাট থেকে বাহাদুর বাজার-পুরাতন বাহাদুর বাজার দুই পাশের ফুটপাত আশপাশের দোকানদারদের দখলে। কাচারি রোড থেকে পুলিশ লাইনস পর্যন্ত একই চিত্র। স্টেশন রোড, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রাস্তার ওপারে, দিনাজপুর জেনারেল (সদর) হাসপাতাল মোড়, ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে সুইহারী সড়ক পর্যন্ত কলা ও ফল ব্যবসায়ীদের দখলে।

 

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল আহাদ বলেন, ‘সড়ক প্রশস্তকরণ, ফুটপাত রাখতে হলে অপরিকল্পিত সব ভবন সিঙ্গাপুরের মতো ভেঙে ফেলতে হবে। এখনো সময় আছে মহাপরিকল্পনা ধরে কাজ করার। প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ একাট্টা হলে সাজানো গোছানো নগর উন্নয়ন সম্ভব।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version