দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সমাজসেবা অফিস থেকে মোটা অঙ্কের ঋণসহ বয়স্ক বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সমাজসেবা অফিসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী লুৎফর রহমান ও তার দূর সম্পর্কের ভাগ্নি ছাবিনা বেগমের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও আলাদিপুর ইউনিয়নে লুৎফর রহমান ও ছাবিনা বেগমের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথকভাবে অভিযোগ করেছে একাধিক ভুক্তভোগী পরিবার। টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে আলাদিপুর ইউনিয়নে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করার পর সমাজসেবার কর্মচারী লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন ছাবিনা বেগম।
এদিকে টাকা ফেরতের জন্য সমাজপতি ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, ফুলবাড়ী সমাজসেবা অফিসে কারিগরি প্রশিক্ষক পদে কর্মরত লুৎফর রহমান ও তার সম্পর্কের ভাগ্নি মেলাবাড়ী জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের মোস্তাফিজার রহমান মুক্তির স্ত্রী ছাবিনা বেগম সমাজসেবা অফিস থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে দেয়াসহ বয়স্ক বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলে গ্রামের নিরীহ লোকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন টাকা চাইতে গেলে ছাবিনা বেগম ও লুৎফর রহমান একে অপরের ওপর দোষ দিয়ে সময়ক্ষেপণ করছেন। এ কারণে ভুক্তভোগীরা আলাদিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে ছাবিনার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন।
আলাদিপুর ইউনিয়নে অভিযোগ করতে আসা মেহেরাব হোসেন বলেন, সমাজসেবা থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে ছাবিনা ও লুৎফর একইভাবে মেলাবাড়ী গ্রামের সঞ্জয় কুমারের কাছ থেকে নিয়েছেন ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা ও ইসমাইলপুর গ্রামের আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে নিয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এছাড়া রাজারামপুর গ্রামের হাবিছা বেগম বলেন, তাকে বয়স্কভাতার কার্ড দেয়ার কথা বলে নিয়েছেন ৩ হাজার টাকা। একইভাবে সেনড়া গ্রামের রোকেয়া খাতুনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, সমসের নগরের সাইদুল ইসলামের কাছ থেকে ১০ টাকা, জয়কৃষ্ণপুর জোলেখা বেগমের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, মিনা য়ারা বেগমের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, জিয়াত গ্রামের মনির উদ্দিনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, নুরুন্নাহার বেগমের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা।
তারা এভাবে শত শত নিরীহ গ্রামবাসীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আলাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাশমুস সাকির বাবলু বলেন, এ পর্যন্ত ২৫ জন ভুক্তভুগী বিচার চেয়ে ইউনিয়ন কার্যালয়ে আবেদন করেছে, এখনো প্রতিদিনে নতুন নতুন মানুষ আবেদন নিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অফিস থেকে কাজ করে দেয়ার কথা বলে সব অর্থই লুৎফর রহমান নিয়েছে বলে দাবি করেন ছাবিনা বেগম।
তিনি বলেন, লুৎফর রহমান টাকা আত্মসাৎ করায় তিনি এখন বিপদে পড়েছেন। এ কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তিনি লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
তবে লুৎফর রহমান বলছেন, এ টাকা সবই ছাবিনার কাছে আছে। তবে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলছেন, লুৎফর রহমানের নির্দেশে তারা ছাবিনা বেগমকে টাকা দিয়েছে। তারা একে অপরের আত্মীয় হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে সমাজসেবার বিভিন্ন সুবিদা দেয়ার কথা বলে এ টাকা নিয়েছে।
এদিকে টাকা নেয়ার ঘটনায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আখতারুজ্জানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লুৎফর রহমান ৮ মাস পূর্বে এলপিআরে গেছে, এখন তার বিষয়ে কোনো কথা বলতে তিনি পারবে না বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াসিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য