বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার পুরাতন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ভৈরব নদের ওপর নির্মিত বিকল্প কাঠের সেতুতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে হাজার হাজার মানুষ। এক বছর আগে নতুন করে নির্মাণের জন্য মূল বেইলি ব্রিজটি ভেঙেফেলায় বাধ্য হয়ে মানুষ বিকল্প এ সেতু ব্যবহার করছে। এ অবস্থায় গাফেলতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এবং বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের বিরুদ্ধে।
ঠিকাদার মাহবুব ব্রাদার্স ও সওজ সূত্রে জানা যায়, ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী ২০২১ সালের নভেম্বরে পুরাতন বেইলি ব্রিজটি ভেঙেফেলা হয়। এরপর ২০২২ সালের মার্চে নতুন কংক্রিটের ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মানুষ ও যানবাহনের চলাচলের জন্য তারা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার কাঁঠালতলায় বেইলি ব্রিজের পাশে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে।
যেনতেনভাবে তৈরি করা কাঠের সেতুটি নির্মাণের ৫/৬ মাসের মধ্যেই ভেঙে নড়বড়ে হয়ে একপাশে হেলে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্কুলপড়ুয়া শিশুসহ সাধারণ মানুষ যাতায়াত করছে।
অন্যদিকে দেড় বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও নতুন কংক্রিট সেতু নির্মাণ কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র নদীর দুপাশের রাস্তার প্রান্তে ভার্টিকাল ওয়ালের আংশিক কাজ করে রেখে দিয়েছে।
ঠিকাদার মাহবুব ব্রাদার্স ওই একই মহাসড়কে ছোট বড় মোট ১০টি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের কাজ পায়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এসব সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সেতুর পাশে বসবাসকারী স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বছর আগে নদীর ওপর বেইলি ব্রিজের বিকল্প হিসেবে ঠিকাদার বাস ও কাঠ দিয়ে একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করেন। উপজেলা সদর ও পাশ্ববর্তী দুই ইউনিয়নের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। নদীর দুই পাশে কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি স্কুল মাদরাসা রয়েছে।
প্রতিদিন ছোট-বড় কয়েকশত শিক্ষার্থী এখান থেকে যাতায়াত করে, কিন্তু প্রায় ৫/৬ মাস ধরে সেতুটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেতুটির বেশ কয়েকটি অংশ ভেঙে গেছে। নদীর মাঝে সেতুর দুটি স্থানে দেবে গিয়ে হেলে পড়েছে। এতে পারাপারের সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া সেতুর হেলে পড়া অংশ দিয়ে যাতায়াতের সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এলাকাবাসী বারবার বিকল্প সেতুটি মেরামতের দাবি জানালেও কানে তুলছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ব্রিজ সংলগ্ন মূলঘর ইউনিয়নের চরভৈরব গ্রামের বাসিন্দা মো. লতিফ মোল্লা, ভ্যানচালক ফিরোজ আলী, সবজি চাষি কালীদাসসহ অনেকে জানান, সেতু দিয়ে মূলঘর এলাকা থেকে ফকিরহাট সদরে আসতে শুধুমাত্র ১২০ ফুটের দুরত্ব। অথচ কাঠের সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষকে ভ্যান, অটো নিয়ে এক থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে ফকিরহাট সদরে আসতে হয়। আবার ব্যস্ততম ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। কয়েক দিন আগে এভাবে ঘুরে আসতে গিয়ে স্থানীয় এক ভ্যানচালক বাসের ধাক্কায় মারা গেছেন বলে জানান লতিফ মোল্লা।
মূলঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার জানান, ভাঙা বিকল্প সেতুর জন্য মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিকল্প সেতু মেরামতের পাশাপাশি ওয়ার্ক অর্ডারে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে কংক্রিট সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করে জনগণের চলাচলের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক মো. আশরাফ আলী বলেন, কোরবানির ঈদের পরে গার্ডারের কাজ শুরু হবে। এরপর ক্রাব ও রাস্তার কাজ করা হবে। বিকল্প সেতুটি দ্রুত মেরামত করা হবে। ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, জনদুর্ভোগ বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পে বর্ণিত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে বলেছি। সরকারের উন্নয়ন কাজে কোনভাবেই অবহেলা করা উচিত হবে না।
বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাগর সৈকত মন্ডল বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ১০টি সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য একাধিকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। যেহেতু তারা প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেনি। তাই ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য