-->

অবাধে বালু-পাথর লুট, ভাঙনের শঙ্কায় নদীর তীর

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
অবাধে বালু-পাথর লুট, ভাঙনের শঙ্কায় নদীর তীর
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ধোপাজান নদীর তীর কেটে বালু তুলছে বালুদস্যুরা

বালু-পাথরমহাল ধোপাজান নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার ও বোমা মেশিন চালিয়ে অবাধে বালু ও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকারিভাবে ইজারা বন্ধ থাকলেও একটি চক্র কৌশলে কোটি টাকার বালু-পাথর বিক্রি করছে। এতে ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে কয়েক কিলোমিটার নদীতীর।

 

কিছু দিন আগে নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা পাথর অভিযান চালিয়ে জব্দ করে প্রশাসন। জব্দকৃত পাথরের পরিমাণ ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৭৩ ঘনফুট। পরে তা প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি হয়। এভাবে নদীর বালু এবং পাথর লুট করে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে।

 

ফারুক মিয়া নামে এক ক্রেতা আয়কর, ভ্যাটসহ প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ ৩২ হাজার ৯৪৯ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসন এক মাসের মধ্যে পাথর সরানোর জন্য কার্যাদেশ দেয় নিলাম গ্রহণকারীকে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেবল নিলাম থেকে কেনা পাথর বিক্রির কথা থাকলেও নদী থেকে পাথর তুলে বিক্রি করছেন ফারুক মিয়া। তিনি শ্রমিক দিয়ে নদী থেকে পাথর তুলছেন। প্রতি বারকি (ছোট নৌকা) পাথর তারা কেনেন ১ হাজার থেকে ১৮০০ টাকা দরে। এসব বারকি থেকে বড় পাথর বাল্কহেডে রাখা হয়। বাল্কহেড বোঝাই করে নদীপথে বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে পাথর।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জের ধোপাজান বালুমিশ্রিত এ পাথরমহাল। ২০১৮ সালে ৬ মাসের জন্য সর্বশেষ প্রায় ১৭ লাখ টাকায় খন্ড কালীন ইজারা দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে ইজারা বন্ধ রয়েছে। তবে এলাকাবাসী বলছেন, ধোপাজানে ইজারা বন্ধ থাকলেও নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন থেমে নেই।

 

কাইয়ারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আহমেদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন হাজারো শ্রমিক নদীতে পাথর উত্তোলন করে। ব্যবসায়ীরা সেগুলো নদীর পাড়ে জমা করে রাখেন। বেশি পাথর জমা হলে ব্যবসায়ীরাই প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে প্রশাসন থেকে টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে সেগুলো জব্দ করে নিলামে বিক্রি করে। নিলাম ডাক থেকে কেনা পাথর দেখিয়েই নিলামবিজয়ী ব্যক্তি বা চক্র নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

জানতে চাইলে, এক মাসের জন্য নদী লিজ এনেছেন দাবি করে ফারুক মিয়া জানান, এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ঘনফুট পাথর সরাতে পারেননি তিনি। একটি বাল্কহেড বোঝাই করতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ দিন লাগে। ছোট বারকি নৌকা দিয়ে বড় নৌকা (বাল্কহেড) লোড করতে হচ্ছে। এতে তিনি লোকসানের মধ্যে আছেন বলে দাবি করেন।

 

গত ৮ জুন ধোপাজান পরিদর্শনে যান পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক। তিনিও নদীতে ড্রেজার ও বোমা মেশিন চালিয়ে পাথর উত্তোলনের সত্যতা পেয়েছেন। তিনি জানান, পরিদর্শনে এসে তিনি প্রাথমিকভাবে ড্রেজার মেশিন চালানোর সত্যতা পেয়েছেন।

 

মোহাইমিনুল হক বলেন, নদীর পাড় কেটে যে অবস্থা করা হয়েছে সেটি ভবিষ্যতের জন্য হুমকি স্বরূপ। বড় ধরনের বন্যা বা দুর্যোগ এলে পাড় ভেঙে তীরবর্তী বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version