-->
শিরোনাম

সহস্রাধিক রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং, জনচলাচলে ঝুঁকি

মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম (কুমিল্লা)
সহস্রাধিক রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং, জনচলাচলে ঝুঁকি
অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোতে এভাইে মুখোমুখি হতে হয় যানবাহন-মানুষ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৩টি ট্রেন রুটে প্রায় সহস্রাধিক বৈধ-অবৈধ অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং পারাপারে মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

বিশেষ করে ‘‘সাবধান’ এ লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই, নিজ দায়িত্বে পারাপার হোন, পারাপারে দুর্ঘটনার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়’’ বলে বহু সতর্কবাণী লিখে প্রচার চালালেও থেমে নেই ট্রেন দুর্ঘটনা। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে অভিমত একাধিক বিশ্লেষকদের।

 

স্থানীয় রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকা-লাকসাম-চট্টগ্রাম, লাকসাম-চাঁদপুর, লাকসাম-নোয়াখালী ট্রেন রুটের ৩টি লাইনে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলো দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ পারাপারসহ অসংখ্য পন্যবাহী ছোট-বড় নানা যানবাহন চলাচল করছে। অথচ মরণ দানব দুর্ঘটনা নিরসনে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগের নীরব দর্শকের ভূমিকা যেন ভাবিয়ে তুলেছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে।

 

আবার ওই ৩টি শাখা লাইনের কোথাও কোথাও জেলা-উপজেলা পরিষদ, এলজিইডি, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ একাধিক দাতা সংস্থার অর্থায়নে রেললাইনের ওপর দিয়ে কাঁচা-পাকা অসংখ্য সড়ক নির্মাণ করা হলেও ওইসব লেভেল ক্রসিংগুলো এখন জনচলাচলে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ওই সড়কগুলো নির্মাণে বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

 

বিশেষ করে প্রতি কিলোমিটার রেললাইনে একটি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। পূর্বাঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ২৩০টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে প্রায় ৭১৯টি অবৈধ। মাত্র ৫১১টি বৈধ লেভেল ক্রসিং থাকলেও অনেকাংশে গেট কিপারসহ বেরিকেড সরঞ্জাম নেই। ইতিমধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় দপ্তর লেভেল ক্রসিংগুলোকে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে বৈধতা দিতে যাচ্ছে।

 

প্রথম পর্যায়ে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ লেভেল ক্রসিংয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে ১ হাজার ৩৮ জন গেটম্যান নিয়োগ দেয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ এবং গত কয়েক বছরে বহু লোকজনও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবুও কাটছে না এ অঞ্চলের মানুষের আতংক।

 

সূত্রটি আরো জানায়, ঢাকা-লাকসাম-চট্টগ্রাম লাইনে বৈধ-অবৈধ প্রায় ৫ শতাধিক, লাকসাম-নোয়াখালী লাইনের ৫০ কিলোমিটার রেলপথে প্রায় অর্ধশতাধিক লেভেল ক্রসিং কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ৪০টি অবৈধ, লাকসাম-ফেনী পর্যন্ত রেললাইনে প্রায় শতাধিক ও লাকসাম-চাঁদপুর লাইনে প্রায় অর্ধশতাধিকসহ ৩টি লাইনেই লেভেলক্রসিংগুলো বিদ্যমান থাকলেও সিংহভাগই অবৈধ এবং গেটম্যান নেই।

 

আবার লাকসাম রেলওয়ে জংশনের প্রায় ৩শ গজ উত্তরে ৬-৭টি রেললাইনের ওপর দিয়ে পৌরসভার অর্থায়নে পাকা সড়কটি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষসহ অসংখ্য যানবাহন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনো টনক নড়েনি।

 

এ এলাকায় রয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক বিভাগীয় দপ্তর, লোকোসেডসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা কেন্দ্র। বিশেষ করে ঢাকা-লাকসাম-চট্টগ্রাম রেললাইনে মঞ্জুরিকৃত বৈধ লেভেল ক্রসিং ২৪২টি গেট কিপার থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৩৬ জন এবং বাকি ২০৬টি গেটম্যান নেই। এ ছাড়া বৈধ লেভেল ক্রসিং ৪৩৬ এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের সীমানায় ২৭৩ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬১টি। ওই লাইনে ৮১৪টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে এর মধ্যে ঢাকায় ৪৩১টি এবং চট্টগ্রামে ৩৮৩টি বিদ্যমান।

 

সূত্রগুলো আরো জানায়, ওই ৩টি রেলওয়ে লাইনে গত ৫ বছরে স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক দুর্ঘটনার হিসাব নিলেই পাওয়া যাবে মরণ দানবের লোমহর্ষক চিত্র এবং কয়েকশ মানুষের প্রাণহানিসহ কয়েক কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ। বিশেষ করে কিছুদিন আগে লাকসাম-চট্টগ্রাম রেলওয়ে লাইনের হাসানপুর নামক স্থানে এক লোমহর্ষক স্মরণকালের ট্রেন দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ।

 

তবুও থেমে নেই দুর্ঘটনা। অথচ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা এখনো নীরব দর্শক। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও সদ্য মন্ত্রিসভা একনেকে পাশকৃত ময়নামতি বিভাগীয় শহর ছাড়াও দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অসংখ্য জেলা-উপজেলার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ওইসব লেভেল ক্রসিং। ওই লাইনগুলোর লাকসাম পৌর শহরের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকির চিত্র আরো ভয়াবহ।

 

এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরের কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও কোনো জবাব নেয়া সম্ভব হয়নি; তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাধিক দপ্তরের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া গেলেও বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version