-->

৪শ বছরেও কমেনি ধামরাই রথযাত্রার জৌলুস

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
৪শ বছরেও কমেনি ধামরাই রথযাত্রার জৌলুস
ধামরাইয়ে শ্রী শ্রী যশো মাধবের রথযাত্রার প্রস্তুতি চলছে

ঢাকার ধামরাইয়ে ৪০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী যশো মাধবের রথযাত্রা শুরু হবে ২০ জুন। কেবল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নন, ধামরাই রথযাত্রা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐতিহ্য আর সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনে পরিণত হয়েছে।

 

এ উপলক্ষে আয়োজক কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ ৬০ ফুট উঁচু কাঠের তৈরি এই রথের ধোয়া-মোছার পর রং তুলির কাজও প্রায় শেষের দিকে। শেষ পর্যায়ের রং তুলির আঁচড় টানছেন কারিগররা।

 

ধামরাই রথযাত্রা এতটাই বিস্তৃত ও ঐতিহ্যবাহী যে ধামরাই রথের মতো এত সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রথের ইতিহাস বাংলার আর কোথাও পাওয়া যায় না। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ধামরাইতে বালিয়াটির জমিদারদের অর্থায়নে ৬০ ফুট উঁচু রথ নির্মিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই ঐতিহাসিক রথটি পুড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরেরা। পরবর্তীকালে বিখ্যাত দানবীর এবং সমাজসেবক রণদা প্রসাদ সাহার প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অর্থায়নে নির্মিত হয় বর্তমানের ধামরাই রথটি।

 

ঐতিহ্যবাহী ধামরাই রথের সূচনা হয়েছিল ১০৭৯ বঙ্গাব্দে। ধামরাই রথযাত্রা শুরুর পেছনেও রয়েছে সুপ্রাচীন এক ইতিহাস। এই রথযাত্রার সূচনা হয়েছিল স্থানীয় যশো মাধব মন্দিরকে কেন্দ্র করে। কথিত আছে, একবার পাল বংশের রাজা যশোপাল হাতির পিঠে চড়ে বেড়াতে যান ধামরাইয়ের শিমুলিয়ার কাছে এক গ্রামে। রাস্তায় চলতে চলতে হঠাৎ রণস্থান নামক স্থানে একটি উঁচু লাল মাটির ঢিবি দেখতে পেয়ে রাজাকে বহনকারী হাতিটি থেমে যায়। হাতির মাহুতের বহু চেষ্টা সত্তে¡ও কিছুতেই হাতিটি আর এগোচ্ছিল না।

 

শত চেষ্টাতেও রাজার মাহুত যখন হাতিটিকে সামনে নিতে পারলেন না, তখন রাজা ভীষণ অবাক হলেন। রাজা যশোপাল তখন হাতি থেকে নেমে গ্রামবাসীকে লাল মাটির ঢিবিটি খননের নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে সেই মাটির ঢিবিতে একটি সুরক্ষিত মন্দির আছে বলে ধারণা করা হলো। পরবর্তীতে রাজার নির্দেশে সেই মাটির ঢিবির গভীরে সুর মন্দির পাওয়া যায়। একই সঙ্গে পাওয়া যায় মাধবের মূর্তি। কথিত আছে, সেখানে মাধবের বউও ছিল। খননকার্য চলাকালে মাধবের বউয়ের দেহ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে গেলে দ্রæত বউ আরও গভীরে চলে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।

 

মাধবের মূর্তিটি এনে পরবর্তীতে ধামরাইয়ের পন্ডিত রামজীবন রায়কে মাধব মূর্তি নির্মাণ করার আদেশ দেন রাজা। পরবর্তীতে রাজা যশোপালের সঙ্গেই নাম মিলিয়ে স্থাপিত হয়েছিল শ্রী যশোমাধবের বিগ্রহ, যা পরে মন্দিরে রূপান্তরিত হয়। শ্রী যশোমাধবের মন্দিরকে কেন্দ্র করেই ১০৭৯ বঙ্গাব্দে সূচনা হয়েছিল যশোমাধবের রথযাত্রা ও মেলা। এই রথযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন-শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

 

বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার শ্রী প্রণয় কুমার ভার্মা, ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রহমান, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার) স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

 

এ ব্যাপারে রথযাত্রা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু নন্দ গোপাল সেন ভোরের আকাশকে বলেন, রথযাত্রার এবং রথ মেলার সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। করোনা মহামারির কারণে দুই বছর পর রথযাত্রা উদযাপিত হতে যাওয়ায় সবাই খুব আনন্দিত। তবে সামাজিকতা মেনেই চলবে এই রথযাত্রা ও মেলার আয়োজন।

 

ধামরাই থানার ওসি হারুন অর রশিদ ভোরের আকাশকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা এবং রথ মেলা আয়োজনে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে যে লক্ষ্যে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি চলমান থাকবে।

 

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী যশো মাধবের রথযাত্রার সব আনুষ্ঠানিকতা এবার শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version