-->

বরিশাল আ.লীগে নতুন মেরুকরণের আভাস

এসএসটি তুহিন, বরিশাল
বরিশাল আ.লীগে নতুন মেরুকরণের আভাস

আশির দশক থেকে বরিশাল আওয়ামী লীগে একক নিয়ন্ত্রণ ছিল দলের জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর। তার একক আধিপত্য নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি কখনো। তিন যুগের সেই প্রথা ভাঙার উপক্রম হয়েছে এবার। হাসানাত না চাইলেও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বরিশাল সিটির মেয়র নির্বাচিত হন তার ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ।

 

হাসানাত তার বড় ছেলে বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন চেয়েছিলেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আবুল খায়েরকে ঘিরে বরিশাল আওয়ামী লীগে তৈরি হয়েছে নতুন মেরুকরণ। তার বিজয়ে সমর্থকরা উজ্জীবিত। তাকে কেন্দ্র করে দলে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন আবুল হাসানাত।

 

জানা গেছে, হাসানাত পরিবারের সঙ্গে আবুল খায়েরের বৈরী সম্পর্ক বহু বছরের। সিটি নির্বাচনে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এতদিন রাজনীতির বাইরে থাকা খায়ের মেয়র মনোনয়ন পেলে পারিবারিক বিরোধ রাজনৈতিক বিরোধে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগের একটি অংশ খায়েরের সঙ্গে যুক্ত হয়। এই অংশটি বিভিন্ন কারণে হাসানাত পরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।

 

খায়েরপন্থিরা প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়ায় বরিশালে আসতে পারছেন না সাদিক আবদুল্লাহ। ভোটও দিতে আসেননি তিনি। স্থানীয় রাজনীতির খোঁজখবর রাখা একাধিক পর্যবেক্ষক বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে বরিশালে হাসানাতের আধিপত্য শুরু। ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির পর বহু বছর বরিশালের বাইরে ছিলেন তিনি। পরে ফিরে এসে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৩ সালে সভাপতি হন।

 

উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে এসে হাসানাত পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ ২০১৮ সালে সিটি মেয়র ও ২০১৯ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও যুগের পর যুগ হাসানাতের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। আবুল খায়ের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এর অবসান চাচ্ছেন তার সমর্থকরা।

 

শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, গত ৪৫ বছর বরিশালে ব্যক্তি ও পারিবারিক বন্দনার রাজনীতি হয়েছে। হাসানাত পরিবারের মতের বাইরে কিছুই হতো না। তিনি বলেন, আবুল খায়েরের বিজয়ে বরিশাল আওয়ামী লীগে নতুন সূর্যোদয় হয়েছে। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, হাসানাত পরিবারকে বাদ দিয়ে বরিশালে রাজনীতি ও বিজয় দুটিই অর্জন করা যায়।

 

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও মহানগর কমিটি বাতিল করে বরিশালে নতুন নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন গঠন করা হোক। এর নেতৃত্ব দেবেন খায়ের আবদুল্লাহ। বরিশাল আওয়ামী লীগ যে হাসানাত পরিবারকেন্দ্রিক ছিল, তার প্রমাণ মেলে কমিটি গঠনেও। ২০১৩ সালে গঠিত জেলা কমিটির সভাপতি হন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, সহসভাপতি ছিলেন তার স্ত্রী শাহান আরা আবদুল্লাহ।

 

সদস্য ছিলেন মেজ ছেলে মইন আবদুল্লাহ, ছোট ছেলে আশিক আবদুল্লাহ ও শ্যালক কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল। ২০১৯ সালে গঠিত মেয়র সাদিকের নেতৃত্বাধীন মহানগর কমিটির সদস্য হন তার স্ত্রী লিপি আবদুল্লাহ, হাসানাতের আরেক শ্যালক কাজী নজরুল ইসলাম, চাচাতো ভাই আমান সেরনিয়াবাত ও ফুফাতো ভাই মোস্তফা কামাল।

 

এ ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) থেকে আশিক আবদুল্লাহ এবং বরিশাল-৩ (মুলাদী-বানারীপাড়া) আসনে মইন আবদুল্লাহ মনোনয়ন পেতে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে দলের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

 

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বরিশাল আওয়ামী লীগে এতদিন জবরদখলের রাজনীতি হয়েছে। এবারের নির্বাচনে আবুল খায়ের মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় বরিশাল আওয়ামী লীগকে শিকলমুক্ত করার পথ তৈরি হলো।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগর শাখার সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, গত কয়েক যুগ বরিশাল আওয়ামী লীগ ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। বরিশালে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন হাসানাত আবদুল্লাহ। আবুল খায়ের নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাজনীতিতে সমতা আনবেন। তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে বরিশাল আওয়ামী লীগে নিশ্চিত নতুন মেরুকরণ হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version