টাঙ্গাইলের নদ-নদীতে পানি বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর পানি বেড়ে স্থানীয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পানি উন্নয়ন বোডর্ (পাউবো) জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। ২৪ ঘণ্টায় যমুনার জোকারচর (ঝিনাই-নিউ ধলেশ্বরী) পয়েন্টে ৭৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ১৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৩৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ধলেশ্বরী নদীর এলাসিন পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বংশাই নদীর মির্জাপুর পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৬ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি প্রতিদিন ২৭ থেকে ৭৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
পুংলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। প্রকল্পের ৪২টি ঘরের মধ্যে ৩৪টি গৃহহীন পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৮টির কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে পাশের নদীতে পানি বাড়তে থাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন শুরু হলে এলাকাবাসী বাঁশ দিয়ে ঘের করে গাছের ডাল-পালা ফেলে। পাউবোর লোকজন ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলছে। জিওব্যাগের ভেতর বালু ভরতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাইরের সুরক্ষা দেয়াল ভেঙে সেখানকার বালুই ভরাট করছে।
স্থানীয়রা জানায়, যমুনার শাখা নিউ ধলেশ্বরীর পুংলী অংশে শুকনো মৌসুমে ড্রেজার ও বেকু দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুংলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ৩ দিন আগে নদীতে ভাঙন দেখা দিলেও সোমবার সকাল থেকে ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে।
ফলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৪টি ঘরে বসবাসকারী পরিবারগুলো আতঙ্কে রয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষণিকভাবে ওই প্রকল্পের ২০০ মিটার এলাকায় প্রায় ৮ হাজার জিওব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ১০০ মিটার এলাকায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা শুরু করা হয়েছে।
ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া মজনু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা আক্তার কর্তৃপক্ষকে জানালেও কেউ দেখতে আসেনি। সোমবার সকাল থেকে ভাঙনের তীব্রতা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এসে পরিদর্শন করে গেছে।
পুংলী গ্রামের বাসিন্দা হবিবর রহমান, নাছির উদ্দিন, আব্দুস সামাদসহ অনেকেই জানান, অপরিকল্পিতভাবে স্থান নির্বাচন ও নদীর তীরে এক কোটি ১৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪২টি ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি। তা ছাড়া শুকনো মৌসুমে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় নদী থেকে ড্রেজার ও বেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বর্ষার শুরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে পুংলী সেতু বা রেলসেতুর ওই এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। তবে নদীভাঙন দেখা দেয়ায় জরুরি সেবার অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০০ মিটারের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছে নদী ভাঙনের খবর পেয়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পাউবোর মাধ্যমে ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙন রোধে জরুরি সেবার বাইরেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য