-->
শিরোনাম

রেলওয়ের জলাশয় প্রভাবশালীদের দখলে, উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
রেলওয়ের জলাশয় প্রভাবশালীদের দখলে, উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী
নীলফামারীর সৈয়দপুরে আবাসিক এলাকার জলাশয় দখল করে ভরাট করছে প্রভাবশালীরা

রেলওয়ের শহর হিসেবে পরিচিত নীলফামারীর সৈয়দপুরে আবাসিক এলাকার পরিত্যক্ত পানির আধার একটি জলাশয় দখলের পর ভরাট করছে তিন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। ভরাটের পর সেখানে নির্মাণ করা হবে বহুতল ভবন। এই জলাশয়টি বন্ধ হয়ে গেলে রেলওয়ের কোয়াটার, বাংলো, অফিস, ক্লাবসহ অন্যান্য বাসাবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অপসারিত পানি নিষ্কাশনের আর কোনো জায়গা থাকবে না।

 

ফলে অচল হয়ে পড়বে পুরো এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এতে ড্রেন উপচে নোংরা ময়লা পানি রাস্তাসহ বাসাবাড়ির আঙিনায় গড়াবে। সৃষ্টি হবে জলাবদ্ধতা। সেই আতঙ্কে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। ভোগান্তির কথা চিন্তা করে প্রতিবাদ জানালেও থামেনি দখলকারীরা।

 

এমনকি স্থানীয় এইএন কর্তৃক নিষেধ করে লাল পতাকাযুক্ত খুঁটি দিয়ে চিহ্নিত করে দিলেও তা উপরে ফেলে পুরোদমে করছে মাটি ভরাটের কাজ। রেলওয়ের এস্টেট বিভাগের পার্বতীপুর ফিল্ড কানুনগো অফিস কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারের প্রতি নেতিবাচক ধারণা দানা বাঁধছে।

 

জানা যায়, শহরের হাতিখানা মহল্লায় লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিমে সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলার সহকারী পুলিশ সুপারের সরকারি বাসভবনের পেছনে একটি বিশালাকৃতির ডোবা রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে শহরের গোড়াপত্তনের সময়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। সেই সময় থেকেই এটি বিদ্যমান। শহরের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা রেলওয়ে অফিসার্স কলোনি। এখানে অবস্থিত সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএসডব্লিউ), কর্ম ব্যবস্থাপক (ডব্লিউএম), রেলওয়ে পুলিশ সুপারসহ সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক ব্যক্তিদের বাংলো ও ডাবল কোয়াটার এবং রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব, অ্যাকাউন্ট অফিস, এইএন অফিস অবস্থিত।

 

এ ছাড়াও রয়েছে লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জিনপীর মসজিদসহ আশপাশের অসংখ্য বসতবাড়ি। ডোবাটি দখল করে মাটি ও বালু ফেলে ভরাট করছেন ওই এলাকার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবদল নেতা ফরহাদ হোসেন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা জুয়েল ও টোকেন। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক অংশ মাটি দিয়ে ভরাটের ফলে ডোবার পানি ড্রেনগুলো দিয়ে উল্টো দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

এতে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অনেকাংশে অচল হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত পানি অপসারণ হলে ড্রেন উপচে পানি রাস্তায় এসে জমছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বাসাবাড়ির আঙিনাসহ নিচু ঘরেও প্রবেশ করছে ওই নোংরা ময়লা দূষিত পানি। এখনই এমন ভোগান্তি। ডোবাটা সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে স্থায়ী স্থাপনা তৈরি হলে পানি নিষ্কাষণ একেবারে বন্ধ হয়ে চরম দুরবস্থায় পড়বে এলাকাবাসী।

 

প্রতিবাদ জানিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। বরং উল্টো দখলকারী সরকারি দলের নেতা আর নির্বাচিত জনপ্রতিধির দাপটে কোণঠাসা অবস্থা। রেলওয়ের কর্মকর্তারাও নির্বিকার থাকায় তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। টাকার বিনিময়ে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ ম্যানেজ হওয়ায় প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে।

 

বিশাল এই জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া ও ব্যবসা করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা হাতে হাত মিলিয়ে দখল ও ভরাট কাজ প্রকাশ্যেই চালাচ্ছে। সংবাদকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে যুবলীগ নেতা টোকেন বাধা দেয়। প্রতিবাদ করলে সরকারি দলের লোক হিসেবে দাপট দেখায়। প্রশাসনকে কটাক্ষ করে বলে, রেলওয়ে কর্মকর্তা আর পুলিশ আমাদের হুকুমে চলে।

 

সাংবাদিকরাও নিউজ করে আমাদের কিছুই ছিঁড়তে পারবে না। জায়গাটা তো মাগনা নিচ্ছি না। অনেক টাকায় কিনে নিতে হয়েছে। রেলওয়ের হলেও এটা আমাদের কেনা সম্পত্তি। এখানে কারো আইন ও মাতব্বরি খাটবে না। কার কি করার আছে করে দেখাক।

 

কাউন্সিলর ফরহাদ ও যুবলীগ নেতা জুয়েলের সাক্ষাৎ না মেলায় এবং মোবাইলে বার বার কল দিলেও রিসিভ না করায় তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে এলাকাবাসী বেশ ক্ষোভের সাথে এই দখলবাজি এবং অবৈধভাবে ও অবিবেচকের মতো ভরাটের প্রতিকার দাবি করেছেন। তারা বলেন, মাত্র তিনজন লোকের বেআইনি খায়েসের কারণে এলাকার হাজার হাজার মানুষ চিরস্থায়ী দুর্ভোগের শিকার হতে চলেছে। তাই এ ব্যাপারে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রশাসন, মেয়র, পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (আইওডব্লিউ) শরিফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে লোক পাঠিয়ে নিষেধ করেছি এবং লাল পতাকা লাগিয়েছি। তারপরও ভরাট কাজ চলছে বলে আমার জানা নাই। তবে সবসময় পাহারা দেয়া তো সম্ভব নয়। আমাদের লোকবল অনেক কম। তা ছাড়া জলাশয়টি মাছ চাষের জন্য লিজ নেয়া। তার শ্রেণি তথা অবকাঠামোগত পরিবর্তন ঘটালে সেটি দেখার দায়িত্ব রেলওয়ের এস্টেট বিভাগের।

 

নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালি-উল হক বলেন, মূলতঃ জলাশয় ও ভূমির দায়িত্ব রেলওয়ে এস্টেট ডিপার্টমেন্টের। আমাদের অধীনে বাংলো, কোয়ার্টার ও অন্যান্য স্থাপনা। তারপরও আমরা জানতে পেরে ব্যবস্থা নিয়েছি। মামলার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। বাকিটা এস্টেট বিভাগ দেখবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version