-->

স্কুলের মাঠজুড়ে সারা বছর থাকে জলাবদ্ধতা

নিত্যানন্দ হালদার, মাদারীপুর
স্কুলের মাঠজুড়ে সারা বছর থাকে জলাবদ্ধতা
মাদারীপুর শহরের শহীদ সুফিয়া পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জলাবদ্ধতা

মাদারীপুর শহরের শহীদ সুফিয়া পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। মাঠের জন্য সরকারি জায়গা থাকলেও তা ভরাটের অভাবে বছরজুড়েই থাকে জলাবদ্ধতা। গভীর নলকূপের পানি নেই। ক্লাসরুমও সংকট। শৌচাগারের অবস্থাও জরাজীর্ণ, শিক্ষকদের অফিস কক্ষটিও ছোটসহ নানা সমস্যা নিয়ে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে।

 

দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা থাকলেও তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি এই চিত্রের। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দাবি, বিদ্যালয়ের মাঠটিতে বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধতা থাকায় তারা বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদের পাঠালেও দুর্ঘটনার ভয়ে খুব চিন্তায় থাকতে হয়। তাই দ্রুত মাঠ ভরাটের দাবি জানিয়েছেন তারা।

 

এ ব্যাপারে প্রশাসন বলছে, মাঠ ভরাটের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তবে তারা ভরাটের জন্য চেষ্টা করছেন। বিদ্যালয়টি সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৩ সালে সরকারি হয় বিদ্যালয়টি। ২০০৪ সালে বিদ্যালয়ের টিনের ঘর ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয়। বন্যাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে অসহায়দের আশ্রয়ের জন্য নিচের তলা পুরো খালি রেখে দ্বিতীয় তলায় ক্লাসরুম নির্মাণ করা হয়। তিনটি শ্রেণি কক্ষ ও শিক্ষকদের জন্য একটি ছোট কক্ষ এবং একটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়। এতে করে মাত্র তিনটি কক্ষে ক্লাস নিতেও সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষকদের।

 

তা ছাড়া ছোট একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও সব ধরনের অফিসিয়াল কাজ করতেও তাদের পড়তে হয় নানা সমস্যায়। ১৭০ জন শিক্ষার্থী ও ৬ জন শিক্ষকদের বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রায় দুই বছর আগে মাদারীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ডিপ টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করলেও এখনো তা পরিপূর্ণভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় সংলগ্ন বাড়িগুলো থেকে পানি এনে পান করছে।

 

শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য টয়লেটটির অবস্থা জরাজীর্ণ। বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া টয়লেটটি বিদ্যালয় থেকে একটু দূরে হওয়ায় এবং প্রায় সময় জলাবদ্ধতা থাকায় যাতায়াতের পথে ময়লা, আবর্জনা বড় বড় ঘাস থাকায় সাপ ও পোকামাকরের ভয় থাকায় শিক্ষার্থীরা যেতে ভয় পায়। তাই জরুরিভাবে টয়লেটসহ ওয়াসব্লক দরকার।

 

বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তা। পেছন দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতে হয়। পুরো বর্ষা মৌসুমে সিঁড়ি পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকে। এ ছাড়াও বাকি সময় বিদ্যালয় থেকে সামান্য একটু দূরে সরকারি খাল জলাবদ্ধতায় ভরা থাকে। সরকারি এই খালটি বিদ্যালয়ের নামে লিজ নেয়া। তাই এই খালটি ভরাট করলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলার জন্য মাঠ পাবে। পাশাপাশি ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারবে।

 

অভিভাবকরাও স্বস্তি পাবেন। সাবা, রেজা, সিমা, শিউলি, আয়ান, আরাফ, আলিফ, তাবসুমসহ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। তারা খেলতে পারে না। বিদ্যালয়ের পাশে পানি থাকায় তারা ভয়ও পায়। তা ছাড়া খাবার পানি না থাকায় পাশের বিভিন্ন বাড়িতে পানি খেতে গেলে বিরক্ত হয়।

 

বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সিমা আক্তারের মা আকলিমা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের পাশেই সব সময় জলাবদ্ধতা থাকে। পানিতে পড়ে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাই মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় লাগে। কি করব তবুও বিদ্যালয়ে পাঠাতে হচ্ছে। তাই সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এটি ভরাট করা প্রয়োজন। তা ছাড়া টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ। ছোট ছোট বাচ্চাদের সমস্যায় পড়তে হয়।

 

আরেক অভিভাবক লাবনী বেগম বলেন, আমার ভাগ্নি এই বিদ্যালয়ে পড়ে। পড়ালেখার মান ভালো তাই এখানে দিয়েছি। কিন্তু বিদ্যালয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। খেলার মাঠ নেই। সারাবছরই জলাবদ্ধতা থাকে। টয়লেটের অবস্থা খারাপ। খাবার পানিরও ব্যবস্থা নেই। এগুলো সব দ্রুত ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের সুন্দর পরিবেশের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।

 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরজাহান বেগম বলেন, আমরা যে কক্ষে বসে অফিসিয়াল কাজ করি, সেই কক্ষটি ছোট। এক সাথে সবাই মিলে কাজ করতে বা টিফিনের সময় বিশ্রাম নিতেও সমস্যা হয়।

 

পাশাপাশি তিনটি শ্রেণি কক্ষ দিয়েই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হয়। তাই শ্রেণি কক্ষের দরকার। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে অনেক সমস্যা আছে। বিশেষ করে খেলার মাঠ নেই। বর্ষার সময় একদম সিঁড়ি পর্যন্ত পানি চলে আসে। শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ খুব জরুরি। সেই সাথে বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষের অভাব, টয়লেট ও ওয়াসব্লক জরুরি।

 

বিদ্যালয়ে ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। কিন্তু আনুষঙ্গিক আরো কিছু কাজের জন্য তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় প্রতি বছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যালয়ের নানাবিধ সমস্যা জেলা পর্যায়ের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version