পরিবেশবান্ধব ইউনিব্লক ইটের সড়ক। গাড়ি চলাচলের জন্য চার লেন ছাড়াও রয়েছে পৃথক সাইকেল এবং ওয়াকওয়ে জোন। চলাচলকারীদের বিশ্রামে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসানো হয়েছে বেঞ্চ। উভয় ফুটপাত এবং আইল্যান্ডে শোভা পাচ্ছে পরিবেশবান্ধব গাছ। এটি পশ্চিমা কোনো দেশ নয়, বাংলাদেশের একটি পৌরসভার সড়ক, যা ইতোমধ্যে গোটা বিশ্বে আলোচিত।
পটুয়াখালী পৌর শহরের ঝাউতলা সড়কের ছবি সম্প্রতি ভারত সরকার তাদের নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের রূপান্তরের ‘অত্যাশ্চর্য প্রতীক’ হিসেবে জি-২০ দেশগুলোর ট্যুরিজম ওয়ার্কিং গ্রুপের সম্মেলনে তুলে ধরলে বিতর্ক দেখা দেয়।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলেছে, ধুলোবালিমুক্ত পরিবেশ, নির্মল বাতাস পেতে সড়কের মাঝখানে ও ফুটপাতে বিভিন্ন প্রজাতির পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানো হয়েছে। গোটা সড়ক পাশ্চাত্য ও সিঙ্গাপুরের স্থাপত্যশৈলীর আদলে করা, লাইটিং সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এতেই ঝাউতলা সড়ক নান্দনিক সৌন্দর্যে ধরা দিয়েছে। শহরবাসীর চোখে যেটি দিনে সুন্দর, রাতে মোহনীয়।
এ সড়ক ধরেই রয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়, শেখ রাসেল শিশুপার্ক, সার্কিট হাউস, পুলিশ লাইন্সসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সড়কের চৌরাস্তায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, তাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা ইতিহাস। পদ্মা ও পায়রা সেতু চালুর পর কদর বেড়েছে পর্যটন জেলা কুয়াকাটার।
বিষয়টি অনুধাবন করে পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চার লেন রাস্তা, ড্রেনেজ, সাইকেল লেন, আধুনিক সড়কবাতি, লেক সৌন্দর্যবর্ধন, দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, ওয়াকওয়ে, ১০তলা পৌর সার্ভিস সেন্টার, ডিসি উদ্যান, মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার, ফুটপাতসহ ৪৬টি প্যাকেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন; যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
বর্তমানে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে, যার মধ্যে সবার নজর কেড়েছে মহাসড়ক থেকে শহরের প্রবেশপথের ঝাউতলা চার লেন সড়ক। কলেজ শিক্ষক পলাশ চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘ভারত সরকার জি-২০ সম্মেলনে তাদের উন্নয়নের চিত্র দেখাতে গিয়ে আমাদের পৌর শহরের সড়ক দেখিয়েছে। এতে আমরা গর্বিত।’
কবি ও সাহিত্যিক গাজী হানিফ বলেন, ‘দিনের চেয়ে রাতের পটুয়াখালী আরো মোহনীয়। বলা যায়, পর্যটকের জন্য পটুয়াখালী এখন একটি নান্দনিক শহর।
পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইয়াসমিন জানান, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী তারা পৌর শহরকে দৃষ্টিনন্দন করতে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করছেন।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন আরজু জানান, পর্যটকের কথা মাথায় রেখে পটুয়াখালী শহরকে ৪৬টি প্যাকেজে উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে।
পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে সোয়া দুই লাখ মানুষ বসবাস করছেন। এ সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত হলেও যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য ২০ বছরের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বহালগাছিয়া থেকে বিসিক পর্যন্ত রিভার ড্রাইভ করার পরিকল্পনা রয়েছে। পৌরসভাকে আধুনিক নগর হিসেবে গড়তে যা করণীয়, সব করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য