-->
শিরোনাম

হাওর এলাকায় বন্যার আশঙ্কা

রুদ্র মিজান
হাওর এলাকায় বন্যার আশঙ্কা

রুদ্র মিজান, সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে: দিনভর বৃষ্টি। অন্যদিকে পাহাড়ি ঢল। এসব কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সুরমা, কালনী ও কুশিয়ারার পানি। পানিতে টইটুম্বুর সুনামগঞ্জের হাওর-নদী। বাড়ছে পানি; বাড়ছে মানুষের দুশ্চিন্তা।

 

হাওরের মাঝখানে দ্বীপের মতো ভেসে রয়েছে একেকটি গ্রাম। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। পানিতে ডুবেছে গ্রামের রাস্তাঘাট। সেখানে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র বাহন নৌকা। সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামগুলো অবস্থা নাজুক। গ্রামগুলোর প্রায় ঘর ছুঁই ছুঁই করছে পানি। আর অল্প পরিমাণে পানি বাড়লে ডুবে যাবে বিভিন্ন গ্রাম। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারতের চেরাপুঞ্জি ও সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

 

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র আশঙ্কা করছে, সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। ইতোমধ্যে বৃষ্টির পানিতে শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। সুনামগঞ্জ শহরের আরপিননগর, কাজীর পয়েন্ট, বড়পাড়া, পশ্চিম হাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

 

দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে দেখা গেছে, বিভিন্ন বাড়ির আঙিনায় পানি। নৌকায় করে পাশের বাড়ির নলকূপ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন ওই গ্রামে মোতালেব। তিনি জানান, রান্নাঘরে পানি উঠেছে। যে কারণে রান্না করতে সমস্যা হচ্ছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকেই এ অবস্থা তাদের।

 

একই অবস্থা রফিনগরের। বৃষ্টি যেন আর না হয়, সেজন্য দোয়া করছেন হাওর এলাকার বাসিন্দারা। আর এক হাত পরিমাণ পানি বাড়লেই বন্যার কবলে পড়বে এ এলাকার লোকজন। ঘরের আসবাবপত্র, গবাদিপশু, ধান রক্ষা করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় হাওর এলাকার মানুষ। পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেলে বিপদের শেষ নেই।

 

ভুক্তভোগীরা জানান, তখন মানুষের জীবন রক্ষা করাই কঠিন হয়ে যাবে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বয়স্কদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া কঠিন। ইতোমধ্যে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে নানা দুর্ঘটনাও। গতকাল দুপুরে সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে নৌকাডুবে তিন শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। তারা সম্পর্কে ভাই-বোন।

 

নিহতরা হচ্ছে গোবিন্দপুর গ্রামের সোহেল আহমেদের মেয়ে ফারজানা (১৩) ও ৮ বছর বয়সি মারজানা এবং ৪ বছর বয়সি রবিন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাদের বাড়ি হাওরের মাঝখানের গোবিন্দপুর গ্রামে। ঘরের সামনেই পানি।

 

যে কারণে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছিল তারা। ছোট একটি নৌকায় ওঠে তিন ভাই-বোন। কিছু দূর যাওয়ার পর ভারী বৃষ্টি এবং বাতাসের কবলে পড়ে নৌকাটি উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিন শিশু ডুবে মারা যায়। কিছু সময়ের মধ্যে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওদুদ জানান।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত তিন দিনে সুনামগঞ্জে প্রায় ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, গত কয়েকদিন ধরে ভারতে বৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড়ি সেই ঢল নামছে সুনামগঞ্জে। সেইসঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জেও। বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাওর ও নদীতে পানি ধারণক্ষমতা কম থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার ভেতরে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে। বৃষ্টি কমলে আবার খুব দ্রুত এ পানি নেমেও যাবে।

 

দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির সুমন বলেন, ঘরের সামনে পানি। আর এক হাত পানি বাড়লেই ঘর ছাড়তে হবে। কিন্তু ঘরের আসবাবপত্র, গোলাভরা ধান কোথায় নিয়ে যাবেন। কোথায় আশ্রয় নেবেন এ নিয়ে দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন কবিরের মতো হাওর এলাকার অসংখ্য মানুষ। তবে আশার কথা হচ্ছে, গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত তেমন বৃষ্টি হয়নি। তারপরও পাহাড়ি ঢলের কারণে অল্প পরিমাণে পানি বেড়েছ।

 

এদিকে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকলে কাছাকাছি স্কুলে আশ্রয় নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।

 

তিনি বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া গত বন্যার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পূর্বপরিকল্পনা ও প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version