কাঁচামরিচের অস্বাভাবিক দাম আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে। এমনটাই অভিমত জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা। খরার কারণে এবার কাঁচা মরিচের ফলন কম হয়েছে। তাই দামও এখন অস্বাভাবিক। তবে বৃষ্টির পানি পাওয়ার পর গাছ সতেজ হইছে। প্রচুর পরিমাণে জোয়ারও (ফুল) আসতেছে। এই ফলনটা ওঠা শুরু করলে দাম কমে যাবে। সেটাও ১০-১৫ দিন সময় লাগবে।
শনিবার কুড়িগ্রামের বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৫০০-৫২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভরা মৌসুমে কেন এত দাম?
শনিবার বিকেলে কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের খালিশা কালোয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে মরিচের খেত। কয়েকটি জমি থেকে কৃষকেরা মরিচ সংগ্রহ করে কিনতে আসা পাইকারের কাছে তা বিক্রি করছেন।
কৃষক ও পাইকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের এই সময়ে খেতে যে পরিমাণ মরিচের ফলন হওয়ার কথা, কৃষকেরা তা পাচ্ছেন না। উৎপাদন কম হওয়ায় এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। জমি থেকে ফসল তুলে খেতেই প্রতি মণ মরিচ ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন কৃষক।
কৃষক মুনতাছির রহমান বলেন, ‘আমি ৬০ শতাংশ জমিতে মরিচ আবাদ করেছি। কয়েক দিন আগের টানা খরায় মরিচের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, পাতা কুঁকড়ে গিয়েছিল। যে পরিমাণ জোয়ার (ফুল) আসার কথা তা আসেনি। ফলে এই সময়ে যতটুকু ফলন হওয়ার কথা তা হয়নি। উৎপাদন কম হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আজ মাত্র দেড়-দুই মণ মরিচ তুলতে পেরেছি। অথচ আমার এই ৬০ শতক জমি থেকে অন্তত ছয়-সাত মণ মরিচ পাওয়ার কথা। এখন বৃষ্টি পেয়ে গাছ সতেজ হয়েছে, জোয়ারও এসেছে। কয়েক দিন পর ফলন বেড়ে যাবে। তখন দামও কমে যাবে।’
মরিচের উৎপাদন নিয়ে একই কথা জানান কৃষক নয়ন ও নিজাম উদ্দিন। তারা বলেন, কয়েক দিন আগের খরার কারণে গাছে তেমন ফুল ছিল না। বর্তমানে খেতে মরিচ কম। বাইরে থেকে মরিচ আমদানিও নেই। উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বাড়ায় দাম বেশি।
দাম কমার সম্ভাব্য সময় জানতে চাইলে এই কৃষকেরা বলেন, বৃষ্টির পানি পাওয়ার পর গাছ সতেজ হইছে। প্রচুর পরিমাণে জোয়ারও আসতেছে। এই ফলনটা ওঠা শুরু করলে দাম কমে যাবে। সেটাও ১০-১৫ দিন সময় লাগবে। আর এর মধ্যে মরিচ আমদানি হলে আগেই কমে যাবে। আবার অতিবৃষ্টিতে গাছ ও ফসল নষ্ট হলে দাম তো কমবেই না, বরং আরো বাড়তে পারে।
আরেক কৃষক আবু সায়েম বলেন, ‘শনিবার এই মাঠ থেকে মাত্র ১০-১২ মণ মরিচ ওঠানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে এখানে অন্তত ৫০-৬০ মণ মরিচ পাওয়ার কথা। কয়েক দিন আগের টানা গরম আর খরায় প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। এখন বৃষ্টি হওয়ার কারণে গাছে জোয়ার আসতেছে। তবে অতিবৃষ্টি হলে আবারো গাছের ক্ষতি হতে পারে। তখন আবার দর পতনের সম্ভাবনা কম থাকবে।’
আবু সায়েম আরো বলেন, আজ খেত থেকে প্রতি মণ মরিচ ১৫-১৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইকাররা এগুলো জেলার বাইরে পাঠাবেন। ঘাটতি ও পরিবহন খরচ মিলে তারা যে দামে বিক্রি করবেন, তাতে প্রতি কেজি ৭০০-৮০০ টাকা পড়ে যাবে।
লালমনিরহাট থেকে মরিচ কিনতে আসা পাইকার আপেল বলেন, ‘আমরা প্রতি মণ মরিচ ১৫-১৬ হাজার টাকা কিনলাম। এই মরিচ জেলার বাইরে পাঠাব। খেত থেকে বেশি দামে কিনলে আমরা তো কম দামে বেচতে পারব না!’
কুড়িগ্রাম শহরের পৌর বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৫০০-৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক দিনের মধ্যে মরিচ আমদানি না হলে এই দাম আরো বেড়ে যাবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, খরায় যেমন ফুল কম এসেছিল তেমনি এখন গাছে যে ফুল আসছে, অতিবৃষ্টিতে তা আবারো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে এই সময়ে কাঁচামরিচের এই দাম অস্বাভাবিক।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য