-->
শিরোনাম

ভাঙনরোধে বাঁধ চান নদীপাড়ের মানুষ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
ভাঙনরোধে বাঁধ চান নদীপাড়ের মানুষ
টাঙ্গাইলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে

যমুনা নদীতে বাড়ছে পানি। ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকায়। ভাঙনের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের হাজারো মানুষ। চোখের সামনে নিমিষেই ভেঙে যাচ্ছে বসত-ভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। ফলে নির্ঘুম রাত কাটছে ভাঙনকবলিত মানুষদের।সরিয়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, আবার অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না। অসহায়ভাবে নীরবে ভাঙন দেখছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো।

 

বলছি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙনের কথা। যমুনা নদী থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ফসলি জমি কেটে বালু বিক্রি করার কারণে এভাবে নদীর তীর ভাঙন হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসীরা।

 

ইতোমধ্যে উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক বসতভিটা, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাটসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা জিও ব্যাগও কাজে আসছে না।

 

জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিতে যমুনা নদীতে আশঙ্কাজনকহারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

 

এ ছাড়া চরাঞ্চলে তিল ও পাটসহ নানা ধরনের ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলবাসী। মানবেতর জীবনযাপন করছে ভাঙনকবলিতরা। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত ভাঙনরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি, পাটিতাপাড়া, সারপলশিয়া, নলশিয়া, ন্যাংড়া বাজার, রায়ের বাশালিয়া, কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা, জগৎপুরা, বাসুদেবকোল, রামাইল, মেঘারপটল এলাকাসহ অর্ধশত গ্রামে যমুনার তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসত-ভিটা, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি।

 

নদীভাঙনের শিকার উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের জিলকদ বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে করে এক দিনেই আমার বসতভিটা যমুনা নদী গিলে খেয়েছে। বাড়ির পাশে থাকা জমিও নদীগর্ভে চলে গেছে বহু আগেই। এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার থাকার জায়গাটুকুও আর নেই। ৫, ১০ কেজি চাল দিয়ে কি করব। এসব দরকার নেই। আমরা ভাঙনকবলিতরা ত্রাণ চাই না, ভাঙনরোধে বাঁধ চাই।

 

একই গ্রামের জামাল উদ্দিন নামে আরো একজন বলেন, আমরা নদীভাঙন এলাকার মানুষ। চোখের সামনে বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। যারাই আসে তারা শুধু দেখে চলে যায়। আর বলে আগামী বছরই বাঁধ করে দেয়া হবে। কিন্তু ফের বন্যা আসে, শুরু হয় ভাঙন। প্রভাবশালীরা নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায় জিওব্যাগ ফেলে। আমাদের বসত-ভিটা রক্ষায় কেউ কথা রাখে না। অন্যের জায়গায় থাকতে হচ্ছে।

 

এদিকে, গত শনিবার দুপুরে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়াসহ ভাঙনের শিকার বিভিন্ন এলাকা পরিদশন করেছেন টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির। তিনি ভাঙনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়াসহ বাঁধ নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দেন। এতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বাবু, গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক সপ্তাহ চিতুলিয়াপাড়ায়, খানুরবাড়ি, ভালকুটিয়া ও গোবিন্দাসীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। দিশেহারা হয়ে পড়েছে গোবিন্দাসীর ইউনিয়ন নদীপাড়ের মানুষ। গত শনিবার আমাদের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তার নির্দেশনায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন বলেন, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উপজেলার গোবিন্দাসী, চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী ও পাটিতাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

 

বেশ কয়েকটি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং নিয়মিত খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। ভাঙনের বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং জিওব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version