-->

অরক্ষিত ড্রেন-খাল, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

চট্টগ্রাম ব্যুরো
অরক্ষিত ড্রেন-খাল, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি
চট্টগ্রামে খোলা ও অরক্ষিত অবস্থায় খাল ও ড্রেন

ড্রেনে পড়ার ঝুঁকি নিয়েই ফুটপাত দিয়ে হাঁটছেন পথচারীরা। রাতে এবং বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সময় এই ফুটপাত দিয়ে চলাচলকারীদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। খোলা ড্রেন ও অরক্ষিত খালে পড়ে দুর্ঘটনা-হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তারপরও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বেশকিছু খাল ও ড্রেন রয়েছে খোলা ও অরক্ষিত অবস্থায়। এর ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে আবারো দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রধান সড়ক মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের ড্রেনের কথা। ফুটপাতের পাশের বিশাল এই ড্রেনগুলো এখনো খোলা ও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, পথচারীরা ড্রেনে পড়ার ঝুঁকি নিয়েই ফুটপাত দিয়ে হাঁটছেন। রাতে এবং বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সময় এই ফুটপাত দিয়ে চলাচলকারীদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায় বলে জানান এলাকাবাসী।

 

বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা এম এ গণি বলেন, ‘এই ব্যস্ত সড়কের দুই পাশের ড্রেন বছরের পর বছর ধরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বর্ষাকালে এই এলাকায় জলাবদ্ধতা সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে। সে সময় রাস্তা ও ড্রেন দুটোই পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পথচারীরা বুঝতে পারে না কোথায় রাস্তা এবং কোথায় ড্রেন। এর ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।’

 

বন্দরনগরীর আরেকটি প্রধান সড়ক মুরাদপুর থেকে ষোলশহর পর্যন্ত সড়কের ড্রেনেও একই অবস্থা। রাস্তার একপাশে একটি প্রশস্ত ড্রেন এবং রাস্তার অপর পাশে একটি খাল (চশমা খাল) রয়েছে। বছর দুয়েক আগে এই খালটিতে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এখনো অরক্ষিত ও খোলা অবস্থায় রয়েছে খালটি।

 

২০২১ সালের ২৫ আগস্ট মুরাদপুর মোড়ে এই খালে পানির তীব্র স্রোতে পিছলে পড়ে ডুবে যায় সালেহ আহমেদ (৫০) নামে এক সবজি ব্যবসায়ী। তাকে এখনো পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় একই খালে পড়ে যায় এক নাবালক ছেলে। নিখোঁজ হওয়ার ৩ দিন পর কামাল উদ্দিন (১০) নামের ওই কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই দুটি মৃত্যুসহ ২০১৭ সাল থেকে গত ৭ বছরে নগরীর অরক্ষিত ড্রেন ও খালে পড়ে কমপক্ষে ৮ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে।

 

চকবাজার ফুলতলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চাক্তাই খাল এখনো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে এবং খালের একাংশ পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরা দেখা গেছে।

 

ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা সমীর জলদাস বলেন, ‘জলাবদ্ধতার সময় খাল-রাস্তা দুটোই পানির নিচে চলে যায়, তাই মানুষ বুঝতে পারে না কোথায় রাস্তা আর কোথায় খাল।’ তিনি বলেন, ‘এলাকায় জলাবদ্ধতার সময় রাস্তা দিয়ে হাটে যাওয়া পথচারীরা আতঙ্কিত অবস্থায় থাকেন।’

 

চসিক কর্মকর্তাদের মতে, শহরে মোট ৫৭টি (১৬১ কিলোমিটার) খাল এবং ৭৬৫ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০২১ সালে ড্রেন, খাল ও ফুটপাতের ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোর ওপর জরিপ চালায়। জরিপের পর মোট ৫ হাজার ৫২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ স্পট চিহ্নিত করা হয়, স্পটগুলোর মোট আয়তন ছিল ১৯ কিলোমিটার কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রক্ষায় কাজ এখনো চলছে।

 

যোগাযোগ করা হলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খোলা ড্রেনে ক্রাব স্থাপন এবং খালের পাশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ হাজার বর্গফুট ড্রেনের ওপর ক্রাব বসানো হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ খালগুলোর মধ্যে ১৮ হাজার বর্গফুট এলাকায় রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।’

 

মুরাদপুর থেকে ষোলশহর ২ নম্বর গেট সড়কে অরক্ষিত ড্রেন ও খাল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বন্দরনগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনের একটি মেগা প্রকল্পের আওতায় সিডিএ এই সড়কের খাল ও ড্রেনের কাজ করছে এবং তাই এটার প্রটেকশন দেয়া সিডিএর দায়িত্ব।’ যোগাযোগ করা হলে সিডিএ মেগা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘সিডিএ সড়কের একপাশে চশমা খালের কাজ করলেও অন্য পাশে ড্রেনের কাজ করছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সড়কের খালের অধিকাংশ জায়গায় সুরক্ষা প্রাচীর নির্মাণ করেছি এবং খালের বাকি অংশে সুরক্ষা দেয়াল নির্মাণের কাজ আগামী শুষ্ক মৌসুমে শুরু হবে।’

 

২০১৭ সাল থেকে নালা ও খালে অন্যান্য দুর্ঘটনা এবং হতাহতের সংখ্যা ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে ড্রেনে পড়ে শেহেরিন মাহমুদ সাদিয়া (১৯) নামে আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী মারা যান। ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা শহরের কালুরঘাট এলাকার ওসমানিয়া খাল থেকে এক নারীকে উদ্ধার করে।

 

২০২১ সালের ৩০ জুন ষোলশহরের চশমা পাহাড় এলাকায় একটি অটোরিকশা খালে পড়ে ৩ জন নিখোঁজ হয়। পরে চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগমের (৬৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খাল দুটি এখনো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০১৮ সালের ৯ জুন নগরীর আমিন জুট মিল এলাকায় আল আমিন নামে এক শিশু ড্রেনে পড়ে যায়।

 

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শীলব্রত বড়ুয়া ৩ জুলাই, ২০১৭ তারিখে বাকালিয়ায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে পা পিছলে নালায় পড়ে যান। চলতি বছরের ৯ এপ্রিল সদরঘাট নালাপাড়া এলাকায় অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে ৩ বছরের শিশু ওজাইফা মারা যায়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version