কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভুল চিকিৎসায় সেলিনা বেগম (৪৭) নামে এক গৃহিণীর মৃত্যুর অভিযোগ মিলেছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল ভাঙচুর করেছে রোগীর স্বজনরা।
শনিবার সকাল ৭টায় ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর নিউ টাউন এলাকার গ্রামীণ হাসপাতালে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেলিনা বেগম পৌর শহরের জগন্নাথপুর দক্ষিণপাড়া আওয়ালকান্দা এলাকার আক্তার মিয়ার স্ত্রী।
স্বজনরা জানান, ৬ জুলাই দুপুরে পৌর শহরের নিউ টাউন এলাকায় গ্রামীণ হাসপাতালে জরায়ু অপারেশনের জন্য ভর্তি করা হয় সেলিনা বেগমকে। ডা. ফাহিমা শারমিন হানীর চিকিৎসাধীন দিনব্যাপী বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৭ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৪টায় জরায়ু অপারেশন করেন। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মোটামুটি ভালো থাকার পর থেকে রাত ১১টায় সেলিনা বেগমের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাত ৪টায় বেশি খারাপ হলে চিকিৎসক সেলিনা বেগমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
এ বিষয়ে রোগীর মেয়ের জামাই শাহ আলম জানান, আমার শাশুড়িকে ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৭ জুলাই শুক্রবার ১১টায় অপারেশনের জন্য ভর্তি করা হয়। এ সময় আমার স্ত্রী ও শ্যালক উনার সাথে ছিলেন।
বিকেল ৪টায় অপারেশন করার পর রাত ২টায় আমার শাশুড়ির অবস্থা খারাপ হয়। চিকিৎসকদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা কোনো পাত্তাই দেয়নি। রাত ৪টায় অজ্ঞান অবস্থায় আমার শাশুড়িকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলে। আমরাও বুঝতে পারছিলাম না কি করব। আমার শাশুড়ির কোনো সাড়াশব্দ ছিল না। পথিমধ্যে একটি হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে তারা বলে আমার শাশুড়ি মারা গেছে।
আমরা তা জেনেও ভোরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার শাশুড়ির মৃত্যু নিশ্চিত করেন। সকাল ৭টায় আমরা আবারও হাসপাতালে ফিরে আসলে স্টাফরা গেট খুলতে চায়নি। পরে আমাদের স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে যায়।
রোগীর স্বামী আক্তার মিয়া বলেন, তারা আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলেছে। সামান্য জরায়ু অপারেশনে একজন নারী কীভাবে মরতে পারে। এর আগেও তারা আরো দুটি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে অপচিকিৎসার মাধ্যমে। আমরা আগে জানলে এ হাসপাতালে আসতাম না।
হাসপাতালের এমডি বদিউজ্জামান বদি জনান, ডা. ফাহিমা শারমিন হানী ও ডা. দীপঙ্কর রায়ের তত্ত্বাবধানে সেলিনা বেগমের চিকিৎসা হয়েছিল। শুক্রবার বিকেলে অপারেশন হয়। সেলিনা বেগমের অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। পথিমধ্যে তিনি মারা যান। সকাল ৭টায় পৌর ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলু মিয়ার নেতৃত্বে হাসপাতাল ভাঙচুর করেছে। থানা পুলিশকে খরব দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলু মিয়া বলেন, এলাকাবাসী খবর দিলে আমি এসে দেখি উত্তেজিত জনতা হাসপাতাল ভাঙচুর করছে। আমি তাদের ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করি। পরে থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. ফাহিমা শারমিন হানীর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার সাথে যোগাযোগের বিষয়ে কোনো সাড়াশব্দ করেনি। এমনকি ডা. ফাহিমা শারমিন হানীর মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য