সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় রেলওয়ের কোয়ার্টার ভেঙে ভবন নির্মাণ করছেন ভূদিস্যুরা। একই সাথে রেলওয়ের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ, রেলওয়ের পানির ট্যাংকি ও জলাশয় ভরাট করে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে। ২০২০ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে দখলদারদের দখল কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তাই তা দেখেও দেখছেন না।
রেলওয়ের সূত্র জানায়, ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর স্থাপিত হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। ওই সময় রেলবিভাগের জমির পরিমাণ ছিল ৭৯৮ দশমিক ৯ একর সম্পত্তি। এর মধ্যে রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাসের জন্য প্রায় ২০০ একর জমিতে দ্বিতল ভবন ও পাকা আধাপাকা কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ করা হয় ৩১টি বাংলো। সাব-বাংলো নির্মাণ করা হয় ১৩৯টি, ২ কক্ষবিশিষ্ট বাসা ৭১১টি ও ১ কক্ষবিশিষ্ট বাসা নির্মাণ করা হয় ১ হাজার ৬০৭টি। এসবের মধ্যে দীর্ঘদিন বরাদ্দ থাকে ৯৭৪টি ও খালি পড়ে থাকে ১ হাজার ৪৬টি বাসা। আর ২২৯টি বাসা খালি পড়ে থাকায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
সূত্রটি আরো জানায়, ২০১৬ সাল পর্যন্ত রেলওয়ের সব সম্পত্তি ছিল নিজ দখলে। কিন্তু রেলওয়ের কিছু অসাধু উপসহকারী প্রকৌশলীর ঘুষ বাণিজ্যের কারণে রেলওয়ের সিংহভাগ জমি ও কোয়ার্টার দখলদারদের দখলে চলে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমি দখল ও কোয়ার্টার ভেঙে ঘরবাড়ি ও বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে ২০২০ সালের পর থেকে।
জানা গেছে, রেলওয়ের জমি দখল ও কোয়ার্টার ভেঙে ঘরবাড়ি নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে প্রথমত বাধা প্রদান করতে হবে। এরপর আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন উপসহকারী প্রকৌশলী। কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে সৈয়দপুর শহরে রেলওয়ের প্রায় শতাধিক কোয়ার্টার ভেঙে ভবন ও পাকা আধাপাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ হলেও কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। ফলে শহরের সাহেবপাড়ায় রেলওয়ের একাধিক দ্বিতল ভবন সংলগ্ন গোডাউন ঘর ও পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। অফিসার কলোনি এলাকায় রেলওয়ের পানির ট্যাংকি ও জলাশয় ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে দোকানঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শহরের প্রধান সড়কের পাশে নির্মাণকাজ চলছে একাধিক মার্কেটের। এসবের নির্মাণকারীদের সবার কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নেয়া হয়েছে বলে একাধিক মহলের অভিযোগ।
স্থানীয়রা বলেন, ২০১৬ সালে উপসহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম তার দায়িত্বে থাকাকালে দখলকারীরা কিছুটা হলেও আতংকে ছিল। কারণ তিনি দখলকারীদের অনেক ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন, মামলাও করেছেন একাধিক। কিন্তু বর্তমান উপসহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম সম্পূর্ণ উল্টো কাজ করছেন।
শহরের গার্ডপাড়ার নাহিদা নামের এক নারী জানান, রেলওয়ের ছোট্ট একটি জমিতে দুই রুম বানাতে গেলে ১৭ হাজার টাকা দিয়েছি। এ ছাড়া অন্যান্য দখলকারীরা বলেন, মোটা অংকের অর্থ না দিয়ে কেউই রেলের জমিতে ঘরবাড়ি বা কোয়ার্টার ভেঙে ভবন নির্মাণ করতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে উপসহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকের সাথে কোনো কথাই বলবেন না বলে জানান।
তবে রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়ালিউল রহমান বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে সদ্য যোগদান করেছি, ২০২০ সালের পর রেলওয়ের জমি দখল ও কোয়ার্টার ভেঙে ঘরবাড়ি নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হলে, বিষয়টি তিনি কঠোরভাবে দেখবেন বলে জানান।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য