-->

বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের চাষ, ফলনও ভালো

আশরাফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বিজয়নগরে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের চাষ, ফলনও ভালো
বিজয়নগরে গাছে গাছে লটকন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারত সীমান্তঘেঁষা বিজয়নগর উপজেলায় এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। গেল দু’বছর ধরে বিজয়নগরে লটকন চাষ হলেও এবারই বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে লকটন বিক্রিও শুরু হয়েছে। বাজারে ৩ ধরনের লটকন বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের লটকন খুচরা ৮০ টাকা কেজি, মাঝারি সাইজের লটকন খুচরা ১২০ টাকা কেজি ও বড় সাইজের লটকন ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় লটকনের চাষ নিয়ে চাষিদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা উপজেলা বিজয়নগরের টিলা ভূমির লাল মাটির লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উপজেলার চম্পকনগর, মেরাশানি, সিঙ্গারবিল ও পাহাড়পুর ইউনিয়নে রয়েছে লটকনের বাগান।

 

চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কোনো ধরনের রোগবালাই না হওয়ায় এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ করা হয়েছে। গত ঈদুল আজহার পর থেকে বাজারে লকটন বিক্রি করাও শুরু হয়েছে।

 

চাষিরা জানান, বিজয়নগরে উৎপাদিত লটকন রসালো, টক ও মিষ্টিতে ভরপুর হওয়ায় বাজারে বিজয়নগরের লটকনের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। প্রতিদিন সকালে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা বাগানে এসে লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

 

এ ব্যাপারে মেরাশানী গ্রামের লটকন চাষি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৭-৮ বছর আগে তিনি ময়মনসিংহ জেলা থেকে ১০০ লটকনের চারা এনে একটি বাগান করি। প্রথমে যখন লটকনের বাগান করি এলাকার অনেকেই এ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। গত ২ বছর ধরে কিছু কিছু গাছে লটকন ধরা শুরু করলেও এ বছর সব গাছে লটকন ধরেছে।

 

তিনি বলেন, বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার উপরে লটকন বিক্রি করতে পারব বলে আশা করি। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের লোকজন সবসময় আমাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে আমি লটকনের চাষ করব।

 

উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের লটকন চাষি বাবুল বলেন, এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারা এসে বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, তার বাগান থেকে তিনি ২ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শাব্বির আহমেদ বলেন, বিজয়নগরের মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

 

এ বছর বাণিজ্যিকভাবে উপজেলায় লকটন চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ২০-২৫ জন চাষি ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের বাগান করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এ বছর উপজেলায় লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করি, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারিভাবে লটকন চাষিদের সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দেয়া হয়েছে। চাষিদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে।

 

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুন্সী তোফায়েল হোসেন বলেন, চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। বাম্পার ফলনও হয়েছে। ইতোমধ্যেই লকটন বিক্রিও শুরু হয়েছে।

 

তিনি বলেন, আশা করি, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করা হবে। ফলন ভালো হওয়ায় লটকনের চাষ নিয়ে চাষিদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version