ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৩ জন। আর এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। এদিকে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মৃত্যু হলেও এখনো ডেঙ্গু রোগীদের জন্য কোনো আলাদা ওয়ার্ড চালু করা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শিগগিরই ৪৮ বেডের ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হবে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে মমেক হাসপাতালে সর্বমোট ১২৩ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে গত এক মাসেই ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯৭। বর্তমানে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৩ জন আর গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২৩ জনই পুরুষ। তাদের প্রায় সবাই ঢাকাফেরত।
জানা গেছে, শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুর রাজ্জাক (৫০) নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা। রাজ্জাক গাজীপুরের মাওনায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার দুপুরে তিনি মমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
এর আগে গত ১ জুলাই বিলকিস আক্তার (৩০) নামে এক রোগী মমেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরদিন রাতে মারা যান। তার বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায়। তিনি থাকতেন রাজধানীর ধানমন্ডিতে। সেখান থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
জেলার তারাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম নামে এক রোগী জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ফলের ব্যবসা করেন তিনি। সেখানেই জ্বরে আক্রান্ত হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে গত ৪ জুলাই ভর্তি হন তিনি।
তৌফিকুল ইসলাম নামে আরেক রোগীর স্বজন বলেন, গত ২৭ জুন থেকে তার স্বামীর প্রচন্ড জ্বর ছিল। এক সপ্তাহ ওষুধ সেবন করেও জ্বর না কমায় তিনি গত বুধবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করান। বৃহস্পতিবার রিপোর্টে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে শুক্রবার বিকেলে রোগীকে মশারি দেয়া হয়।
একই ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগী থাকায় অনেকেই আতঙ্কে আছেন এবং ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার শঙ্কা করছেন রোগী ও স্বজনরা। ডেঙ্গু রোগীদের পাশের বেডে অন্য রোগে আক্রান্ত একজন বলেন, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে। এতে আতঙ্কে রয়েছি আমরা। আমরাও এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় আছি।
হাসপাতালের ডেঙ্গু বিভাগের ফোকাল পারসন ডা. ফরহাদ হোসেন হিরা জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্টসহ সব প্রস্তুতিই নেয়া হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়লেও তাদের চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আলাদা ওয়ার্ডও ঘোষণা করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য