বর্ষার আগমনে ভোর হতেই শুরু পেরেক মারার খটখট শব্দ। কেউ নৌকার কাঠ কাটতে বাঁশেরাই করতে ব্যস্ত, কেউবা নৌকার কাঠের তলা বিছানো নিয়ে ব্যস্ত। সকাল থেকেই নৌকা বানানোর কাজে মগ্ন থাকেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার নৌকা তৈরির কারিগররা।
তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর নৌকা তৈরির কাঠ ও অন্যান্য সরঞ্জামের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় নৌকা তৈরির কারখানার মালিকরা আর্থিকভাবে লাভবান না হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকাতে বন্যার পানিতে রাস্তা তলিয়ে যায়। এতে করে নৌকার প্রয়োজন দেখা দেয়। নিচু এলাকাগুলোয় নৌকা ছাড়া চলাচলের কোনো উপায় থাকে না। নৌকাই তখন একমাত্র যাতায়াতের ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।
উল্লাপাড়ায় বর্ষার আগমনে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নৌকার চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দিনভর আপন মনে কাজ করে চলেছে নৌকা তৈরির কারিগররা। কেউ করাত দিয়ে কাঠ কাটছে কেউবা হাতুড়ি দিয়ে নৌকায় পেরেক লাগাতে ব্যস্ত। রাত দিন একটানা কাজ করেও চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে নৌকা তৈরির কারিগররা।
উপজেলার মোহনপুর গয়হাট্টা উধুনিয়া বাঙ্গালা কয়রা বাদশা বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা ৪২টি কারখানায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারিগররা। তবে নৌকা তৈরির সরঞ্জামের দাম বাড়লেও বাড়েনি নৌকা দাম। এ ছাড়াও অনেকেই পুরাতন নৌকা মেরামত করে নিচ্ছেন ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য।
নৌকা তৈরির কারিগর শ্রী সুদেব জানান, বর্ষা মৌসুম আসায় নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। এ সময় নৌকার চাহিদা ফিরে যাওয়ায় আমরা অতিরিক্ত কিছু আয় করতে পারি। একটি ১২ ফুটের নৌকা বানাতে দুজন কারিগরের এক দিন সময় লেগে যায় অথচ সে অনুযায়ী মজুরি পায় না। নৌকা ভেদে মজুরি ৫০০ থেকে ২৫০০ পর্যন্ত। তবে আমরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মজুরি পাই যা দিয়ে সংসার চালানো দায়।
কাজ থাকলে পরিবারের জন্য কিছু বাজার করতে পারি যা দিয়ে কোনো রকমভাবে চলা যায়। আর কাজ না থাকলে পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহ করাই কঠিন হয়ে যায়। এ বিষয়ে কারখানার মালিক মানিক চৌধুরী জানান, নৌকা তৈরির সরঞ্জামের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় আগের মতো বেশি লাভ হয় না। ডিঙ্গি নৌকাগুলো কাট ও সরঞ্জামাদি ভেদে বিক্রি করা যায় ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এত অল্প টাকায় নৌকা বিক্রি করে খুব একটা লাভের মুখ দেখা যায় না। পূর্বপুরুষের ব্যবসা তার জন্য কোনো মতে ধরে আছি। তা ছাড়া সরকারিভাবে কোনোরকম সুযোগ-সুবিধা বা ঋণ পাই না।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল মোতালিব বলেন, আমাদের সমাজসেবা অফিস থেকে নৌকা তৈরির কারিগরদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। তবে সমাজসেবা অফিস থেকে এদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হয়ে থাকে, যাতে তারা পেশার মান উন্নয়ন করে স্বাবলম্বী হতে পারে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য