-->
শিরোনাম

আবর্জনার ভাগাড় শ্যামাসুন্দরী খাল, ডেঙ্গু আতঙ্কে বাসিন্দারা

রংপুর ব্যুরো
আবর্জনার ভাগাড় শ্যামাসুন্দরী খাল, ডেঙ্গু আতঙ্কে বাসিন্দারা
রংপুর নগরীর শ্যামাসুন্দরী খাল ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে

রংপুরের শ্যামাসুন্দরী খাল এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালে জমে থাকা ময়লার দুর্গন্ধে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। মশা-মাছির আবাসস্থলে পরিণত হওয়ায় একসময়ের আশীর্বাদের খাল এখন অভিশাপ। এই খাল থেকে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। বাসিন্দারা ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছেন। খালটি এখন তাদের গলার কাঁটা।

 

তবে রংপুর সিটির মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার দাবি, বর্তমানে এডিস মশা কিংবা ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু রোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মশা নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কাজে প্রায় দুই শতাধিক কর্মী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে।

 

একসময় শ্যামাসুন্দরী খালকে রংপুর নগরীর প্রাণ বলা হতো। দখল-দূষণে খালটির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। খালটির শ্রীবৃদ্ধিসহ দূষণমুক্ত করতে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। নগরবাসীর অভিযোগ, শ্যামাসুন্দরী ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালটি শুকনো মৌসুমে দুর্গন্ধ ছড়ায় ও বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই কূল ভেসে নগরজুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

 

রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে রংপুর অঞ্চলের মহারাজা জানকী বল্লভ সেনের মা শ্যামাসুন্দরী সেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরে ম্যালেরিয়া দূর করতে নগরীর সিও বাজার এলাকা থেকে মাহিগঞ্জ পর্যন্ত ৮ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করেন জানকী। খালটি মূলত ঘাঘট নদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে খনন করা হয়।

 

এদিকে ১৮৯৪ সালে খননের পর থেকে শ্যামাসুন্দরী খালটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ২০১২ সালে রংপুর পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর ওই বছরই খালটি সংস্কার ও এর সৌন্দর্য বাড়াতে ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। খননের সময় খালটির প্রস্থ ছিল স্থানভেদে ৬০ থেকে ১২০ ফুট।

 

কিন্তু খালের দুই পাড় অবৈধভাবে দখল করে বসতবাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় খালের প্রশস্ত ১৫ ফুটে দাঁড়িয়েছে। দুই পাড়ের বাসিন্দারা বাড়ির টয়লেটের লাইন খালের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়ায় মলমূত্র সরাসরি খালে পড়ছে। অনেকেই বাড়ির আবর্জনা ও বর্জ্য খালেই ফেলছেন।

 

নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল, ভ্যানচালক সোহেল রানা, কলেজছাত্র হাসিনুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলো। তাদের ক্ষোভ, নির্বাচনের সময় শ্যামাসুন্দরীর অবস্থা পরিবর্তনের কথা বলেন প্রার্থীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন না তারা।

 

ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার বাসিন্দা নওশাদ বেগম বলেন, বর্ষাকালে শ্যামাসুন্দরীর নোংরা পানি বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়। জন্ম নেয় মশা। নদী নিয়ে কাজ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ।

 

তিনি বলেন, খনন করে পানিপ্রবাহ বাড়ানো না গেলে নগরবাসীর সামনে চরম বিপদ। সারাবছর থাকবে জলাবদ্ধতা।

 

মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বেহাল শ্যামাসুন্দরীর কথা স্বীকার করে বলেন, রংপুর নগরীর পানি নিষ্কাশনে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মিত হয়েছে। পুনঃখননসহ দু’পার্শ্বে রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। দূষণ রোধ ও দৃষ্টিনন্দন করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। বরাদ্দ পেলে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version