স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কিশোরগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন রোগী। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১২ জন, কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৪ জন ভর্তি আছেন এবং ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন একজন।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ৯৮ শতাংশই ঢাকা থেকে এসেছেন।
সরেজমিনে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, মশারি টাঙানো ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা অন্যান্য রোগীর ওয়ার্ডে আলাদা বেডে শুয়ে আছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অন্যান্য রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স জানান, এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড নেই। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৪র্থ তলায় মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য সাধারণ রোগীরাও বিপাকে রয়েছেন।
মঙ্গলবার এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন ৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ২ জন। জেলায় জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোট ১০৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন মোট ৯১ জন ডেঙ্গু রোগী। তবে এই সময়ের মধ্যে কিশোরগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয়নি।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পূর্ব ভরাটি গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৩৫) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আনোয়ার হোসেন বৌলাই ইউনিয়নের ভরাটি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি ঢাকার মিরপুর ১২নং সেক্টরের একটি টেক্সটাইল কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের পরের দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ১২ দিন ধরে চিকিৎসা চলছে। জ্বর না কমলে ডাক্তার ছাড়পত্র দেবে না। আমি ঢাকা থেকে জ্বর নিয়েই ঈদে বাড়িতে এসেছিলাম। বাড়িতে আসার পর জানতে পারি আমার ডেঙ্গু হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার কিরাটন এলাকার শাহাবুদ্দিন (২৩) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শাহাবুদ্দিন কিরাটন ইউনিয়নের কিরাটন গ্রামের মো. সাফিরউদ্দিনের ছেলে। তিনি ঢাকার এয়ারপোর্ট এলাকায় বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে টাইলস মিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি বলেন, ১১ দিন ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। জ্বর থামছে না, এদিকে ডাক্তার বলছে জ্বর না সারলে বাড়িতে যাওয়া যাবে না।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বাদাশ্রীরামপুর গ্রামের সাহানুর আলম (৩৭) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সাহানুর আলম বাদাশ্রীরামপুর গ্রামের মো. শাহাবুদ্দিনের ছেলে। তিনি আবুল খায়ের কোম্পানিতে মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করেন। তিনি রাজধানীর ওয়ারিতে থাকেন।
সাহানুর বলেন, ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর জানতে পারি আমার ডেঙ্গু হয়েছে। ঈদের পর থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত কোনো উন্নতি হয়নি।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জেলা বিভিন্ন হাসপাতালে কঠোর সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীরা জেলার বাসিন্দা হলেও এসব রোগী রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য জায়গা থেকে আক্রান্ত হয়ে কিশোরগঞ্জে এসেছেন। এখন পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলার কয়েকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
এর মধ্যে মিঠামইন, ভৈরব, বাজিতপুর, তাড়াইলে একজন করে আক্রান্ত হয়েছে। তবে বেশিরভাগ রোগী ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে কিশোরগঞ্জের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য