উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা অতিবৃষ্টির কারণে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় শুক্রবার সকাল থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে এবং এতে প্লাবিত হয়েছে চর এলাকার নিম্নাঞ্চল। শুক্রবার সকাল থেক তিস্তা ব্যারেজের ডারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার ১২টি গ্রাম তালিয়ে গেছে। তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
এতে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তায় পানি বাড়ায় স্থানীয় লোকজন তাদের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেক পরিবারের থাকার জায়গা না থাকায় বাঁধের ধারে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা দুর্গতদের একজন বলেন, ‘তিস্তার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া হামরা আকাশের নিচত আছি।’
তলিয়ে গেছে রোপণকৃত ধানের বীজ তলা। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ডারিয়া পয়েন্টের ৪৪টি জল কপাটের গেট খুলে দেয়া হয়েছে। পানির স্রোত বাড়ার কারণে গঙ্গাচড়া উপজেলার ১২টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০ হাজার পারিবার। তাদের যেন কষ্টের সীমা নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.৫৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ সেন্টিমিটার) যা এখনো বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়া উপজেলার মটুকপুর, চিলাখাল, বিনবিনা চর, চর নোহালী, ছালাপাক আলালের চর, ইশোরকোল, খলাইয়ের চর, কাশিয়াবাড়ীর চর, ইচলি, চল্লিশসাল শংকরদহ চর, চরে বসবাসকারী পরিবারগুলো প্রতি বছরের ন্যায় আবারো পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
শংকরদহ গ্রামের বাসিন্দা আনারুল ইসলাম জানান, কালকেও পানি একটু কম ছিল। শুক্রবার সকাল থাকি পানির চাপ অনেক বেশি বাড়ছে। এজন্য চরে বসবাসকারী পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি আসাবাবপত্র, গরু, ছাগল নিয়া নৌকায় করে উচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
বিনবিনা চরের মাজেদ মিয়ার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। আমার এখন বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার সংকটে আছি, আমাদের ছোট ছোট শিশু, বয়স্ক লোক, এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের নিয়ে মহা বিপদে দিন কাটছে। নেই খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের সংকটে আছি।
চল্লিশসাল গ্রামের শায়লা বেগম বলেন, ‘হামার বাপদাদার ভিটামাটি সব কিছুই নদীতে চলি গেইছে। যার কারণে হামার আর কিছু নাই। আবাদ সুবাদ করি খামু, তারো বুদ্ধি নাই। এই তিস্তা জীবনের সব কিছু কাড়ি নিয়া হামাক ফকির বানাইছে। এলা হামরা তিস্তার সঙ্গে যুদ্ধ করি আকাশের নিচত আছি।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা জানান, তিস্তার পানির প্রবল স্রোত সকাল থেকে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে গঙ্গাচড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে পানির প্রবল স্রোত নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য