হযরত শাহজালাল-শাহপরান (রহ.) ও এর স্মৃতি বিজড়িত ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেট জুয়াড়ি সিন্ডিকেটে চক্রের দাপটে অসহায়। দেদার চলছে জুয়ার রমরমা ব্যবসা, প্রতিদিন লুটেপুটে খাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। হতাশ নগরবাসী।
বিগত কয়েক বছর ধরে একটি অপরাধী চক্র সিন্ডিকেট করে মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন মার্কেট, ব্যস্ততম রাস্তা, দোকানপাট, অলিগলিতে ও সরকারি ভ‚মিতে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে জুয়ার আসর তৈরি করে নগরীকে কলুষিত করছে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে জুয়ার বোর্ড পরিচালনায় কয়েকজন মূলহোতার নাম। এদের মধ্যে অন্যতম হারুন, বাছন, কাশেম, নজরুল, জামাল, মানিক, শরিফ, জাকির, রাসেল, বাদশা, আইয়ুব, তাহের, মান্নান ও আকাশ এদের সিন্ডিকেট নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে জুয়ার আসর পরিচালনা করে আসছে।
মহানগরীর কীন ব্রিজের দক্ষিণ পাশ সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকায় একটি, শাহজালাল ব্রিজের দক্ষিণ সুরমা সাইডে পুরাতন ফেরিঘাট নামক এলাকা, বেতের বাজার, মদিনা মার্কেট, মকন দোকান, বালুচর এলাকায় রমরমা জুয়ার আসরের তত্ত¡ বেরিয়ে আসে অনুসন্ধানে।
কীন ব্রিজের নিচে নেতৃত্ব দেন তাহের-মানিক, শাহজালাল ব্রিজের পাশে জুয়ার আসর বসে হারুনের, কদমতলি বাসস্ট্যান্ডের পাশে বালুর মাঠে বাছন, সাদুর বাজার বাশপালা মার্কেট এ আবুল কাশেম ও জেসমিন, চান্দিঘাট মাছ বাজারে নজরুল, পুরাতন রেলস্টেশন-মার্কাস পয়েন্টে জামালের, সুবহানীঘাট কাছাবাজারে সাইফুল-হুসেইনের নেতৃত্বে বসে জুয়ার আসর।
স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই চলে এসব অপরাধ। তাই অপরাধী চক্রের অপরাধ দেখেও নীরব ভ‚মিকা পালন করছেন কর্তৃপক্ষ ।
জুয়াড়ি চক্র প্রকাশ্যে দিবালোকে এইসব স্পটে দুপুর ২ ঘটিকা থেকে মধ্যেরাত পর্যন্ত শীলং তীর, তিনতাস, জান্ডু-মুন্ডু, নামক বোর্ড বসিয়ে রমরমা জুয়ার ব্যবসা চালানোর কারণে জুয়ায় আসক্ত নি¤œ আয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে। এসব কারণে একদিকে যেমন বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অন্যদিকে বাড়ছে পারিবারিক বিবাদ-কলহ, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড।
নগরীতে সরেজমিন ঘুরে সাধারণ মানুষ ও বোর্ড মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চালায় অপরাধী জুয়াড়ি চক্র। তারা আরো বলেন, সহযোগিতা না পেলে কীভাবে জুয়ার ব্যবসা চালাব। আমাদের বিরুদ্ধে লিখে আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবেন না।
এ ব্যপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুয়াড়ি বলেন, সারাদিন যে টাকা ইনকাম করি সেই টাকা দিয়া সংসার চলে না। তাই বাড়তি আয়ের জন্য খেলতে আসি। মাঝে মাঝে পাই কিন্তু সবসময় দান পাই না। আবারো পাওয়ার আশায় প্রতিদিন খেলি। তিনি আরো বলেন, মানিক ও তাহের সবার বোর্ডেই জুয়া খেলেছি, খেলতে গিয়ে অনেক সময় খালি হাতে বাসায় যাই, তখন বাসায় ঝগড়া-বিবাদ হয়। অনেক টাকা নষ্ট করেছি ভাই, সেই টাকা তুলতে গিয়ে খাদের কিনারে চলে এসেছি।
ভুক্তভোগীরা বলেন, রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন কিছু করার থাকে না। খোদ প্রশাসনই জুয়া বন্ধ করতে পারছে না। গরিব মানুষগুলো ফকির হয়ে যাচ্ছে আর জুয়ার বোর্ড মালিকরা প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এসব জুয়ায় নগরীর টোকাই, ভিক্ষুক, নিন্ম এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ঠেলাচালক, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, সিএনজি চালক, বাসচালক, মাইক্রোবাস চালক, ট্রাকচালক, পিকআপ চালক, হেলপার, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, বেকার যুবক, বিভিন্ন কলোনির বিধবা মহিলা, কাজের বুয়া এবং তাদের সন্তানরা রাতারাতি বড়লোক হওয়ার লোভে এসব জুয়ার আসরে সারাদিনের ইনকাম বিনিয়োগ করে দিনশেষে প্রতারিত হয়ে খালি হাতে বাসায় ফেরে।
ফলে একদিকে যেমন বাসায় অশান্তি-কলহ সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে পরিবারের আহার জোগাতে চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে এসব জুয়াড়িরা। তাই সিলেট মহানগরীতে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, এই জুয়ার আসরগুলোতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা আরো কঠোরভাবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ ব্যপারে এসএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস)-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাকে সঠিক তথ্য দেন, জুয়ড়িদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য