-->
শিরোনাম

ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ, জেলে পরিবারে দুর্দিন

এমএ অন্তর হাওলাদার, বোরহানউদ্দিন (ভোলা)
ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ, জেলে পরিবারে দুর্দিন
ট্রলার নিয়ে মেঘনা নদীতে মাছের সন্ধানে জেলেরা

দ্বীপ জেলা ভোলার ৭ উপজেলার মেঘনা নদীতে ভরা মৌসুমেও মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। গত বছর এ সময় নদীতে অনেক মাছ পেলেও এ বছর ইলিশ মাছ না থাকায় ভোলার ১ লাখ ৫৮ হাজার জেলে পরিবারে দেখা দিয়েছে দুর্দিন। উপকূলীয় জেলে পরিবারে মিলেনি ঈদের আনন্দ। নদীতে জাল ফেলে দুই-এক হালি ইলিশ হাতে নিয়ে হতাশ হয়ে তীরে ফিরছেন জেলেরা, যা খরচের তুলনায় অনেক কম।

 

এদিকে বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক জেলে। পরিবার পরিজন নিয়ে কাটছে দুর্বিষহ জীবন। সরেজমিনে ভোলা, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন উপজেলার মেঘনা নদী ও মাছ ঘাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে মেঘনা নদী চষে বেড়াচ্ছেন। ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত জাল ফেলেও ধরা দিচ্ছে না ইলিশ।

 

আর কাক্সিক্ষত পরিমাণ ইলিশ না পেয়ে হতাশা নিয়ে তীরে ফিরে আসছেন জেলেরা। এদিকে, ইলিশের ভরা মৌসুমে ইলিশ শিকারের আশায় অনেক জেলেই মৎস্য আড়তদার ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নতুন নৌকা, ট্রলার ও জাল কিনেছেন। কেউ আবার পুরোনো নৌকা, ট্রলার ও জাল মেরামত করেছেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে নদীতে গিয়ে আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।

 

মার্চ-এপ্রিল দুই মাস এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরতে না পারায় দিন দিন ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের। যে কারণে পেশা বদলের সিদ্ধান্তের কথা জানান কয়েকজন জেলে। ইতোমধ্যে অনেক জেলে জাল নৌকা ফেলে রেখে অটোরিকশার হাল ধরে চালাচ্ছেন সংসার।

 

অনেকে কাজের সন্ধানে চলে গেছেন ঢাকা চট্টগ্রামসহ এলাকার বাহিরে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার মির্জাকালু মাছ ঘাট বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. সোহাগ মীর বলেন, আমার আন্ডারে অনেক মাঝিদের দাদন দিয়েছি। নদীতে ইলিশ না থাকার কারণে তারা নদীতে মাছ ধরা রেখে দাদনের টাকার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

 

ঘাটের জসিম মাঝি, দুলাল মাঝি, আবুল হক মাঝি, আলাউদ্দিন মাঝি, সেলামত মাঝি, কামাল মাঝি, আওলাদ মাঝি বলেন, আমরা সারাদিন নৌকা জাল নিয়ে ১০-১২ জন মাঝি মিলে নৌকা বাই। এতে কোনো দিন এক হালি আবার ফাকাও যায়। এতে করে আমাদের দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। আবার এ পেশার লোকজন পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে। তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশীগঞ্জ ও চৌমুহনী মাছঘাটের জেলে, নুরু মাঝি, মফিজ মাঝি, জসিম মাঝি ও জামাল মাঝি বলেন, আষাঢ় মাস ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও সারাদিন নদীতে জাল ফেললে ছোট বড় দুই তিন হালি করে ইলিশ মিলে।

 

যা বিক্রি করে দশ বারো হাজার টাকা পাওয়া যায়। অথচ সাত আটজন জেলে নিয়ে নদীতে নামলে ডিজেল ও অন্য খরচসহ দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। কাক্সিক্ষত পরিমাণে মাছ না পাওয়ায় দিনদিন ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে। অথচ গত বছর এই সময় প্রতিটি জেলে নৌকায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মাছ পাওয়া যেতো।

 

লালমোহন উপজেলার বাত্তিরখাল মাছঘাটের ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন জানান, অনেকে অফ সিজনে ঢাকা ও চাঁদপুরের পাইকারি আড়ত থেকে মোটা অঙ্কের দাদন এনে জেলেদের দিয়েছেন। কথা ছিল মৌসুম শুরু হলে ইলিশ দিয়ে টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু এখন ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায় সেই আড়তদারদের মাছ না পাঠাতে পেরে চাপে আছেন তারা।

 

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা মো. এমদাদুল্লাহ বলেন, বর্তমানে নদীতে ডুবোচরের কারণে পানির গভীরতা কম থাকায় সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণেই নদীতে ইলিশ সংকট রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত শুরু হলে নদীর পানিবৃদ্ধি পাবে তখন জেলেরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশ পাবেন এবং তাদের দুর্দিন কেটে যাবে। ভোলা জেলায় জেলের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার। এদেরকে সরকার বিশেষ ভিজিএফের আওতায় এনেছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version