-->
শিরোনাম

কেওয়া-আনসার টেপিরবাড়ী সড়কের বেহাল দশা, এক যুগেও সংস্কার হয়নি

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
কেওয়া-আনসার টেপিরবাড়ী সড়কের বেহাল দশা, এক যুগেও সংস্কার হয়নি
শ্রীপুরের কেওয়া-আনসার টেপিরবাড়ী সড়কের বেহাল দশা

পৌরসভার কেওয়া বাজার থেকে তেলিহাটি ইউনিয়নের আনসার টেপিরবাড়ীর দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। এ সড়কের দেড় কিলোমিটার অংশ শ্রীপুর পৌরসভা ও এক কিলোমিটার অংশ তেলিহাটি ইউনিয়নের অধীন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত প্রায় এক যুগেও এ সড়কের উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি।

 

শ্রীপুর উপজেলা শহর থেকে ওই সড়কের দূরত্ব সাড়ে চার কিলোমিটার। এটি শ্রীপুর-মাওনা এবং বরমী-মাওনা সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। কেওয়া এবং টেপিরবাড়ী উপজেলার বড় দুটি গ্রাম লিচু এবং কাঁঠালের জন্য বিখ্যাত। ওই ফলের মৌসুমে হাজার হাজার ভারী ও হাল্কা যানবাহন এ সড়কে চলাচল করে। এই দুই গ্রামের লিচু-কাঁঠাল যায় দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়।

 

স্থানীয় বাসিন্দা জিয়া উদ্দিন মামুন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালি আর বর্ষাকালে কাদা-পানিতে চলাচল করতে হয় পথচারী ও এলাকার মানুষকে। রাতে পথ চলতে গর্তে হোঁচট লেগে পড়ে যেতে হয়। কোনো সড়কবাতিও নেই পৌরসভার দেড় কিলোমিটার অংশে।

 

নিয়মিত এ সড়কে ট্রাক চালান বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, সড়কের গর্ত ও উঁচু নিচু অংশে গাড়ি কোথাও কাত হয়ে আবার কোথাও উল্টে পড়ে। প্রতিনিয়ত এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে মানুষ চলাচল করছে।

 

ভ্যান চালক আব্দুল জলিল জানান, প্রতিদিন চার-পাঁচবার এ সড়কে যাতায়াত করেন তিনি। ভঙ্গুর অবস্থার কারণে অধিক পরিমাণে গাড়ির ব্যাটারির চার্জ খরচ হয়। গাড়ির যন্ত্রাংশ ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হয়। কখনো মালামালসহ ভ্যান উল্টে যায়। তার মতো অনেক চালক গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলাচল করছে।

 

টেপিরবাড়ী গ্রামের আব্দুল কাদির ভ্যান চালিয়ে নিজ বাগানের মৌসুমী ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। তিনি দাবি করেন, গত ১৫ বছরে এ সড়কের কোনো সংস্কার তার চোখে পড়েনি। শ্রীপুর থানা শহর থেকে মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার দূরত্বের এ সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।

 

কেওয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত ১০ বছর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বেশ কয়েকবার মাপামাপি করেছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো কাজ লক্ষ্য করা যায়নি। আশপাশের সড়কগুলো সংস্কার হয়েছে। কিন্তু এ অংশটুকু প্রায় এক যুগ ধরে অবহেলিত রয়েছে। সড়কের মৃধাবাড়ির আধা কিলোমিটার অংশে ইটের ছোঁয়াও লাগেনি।

 

টেপিরবাড়ী গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার এক কিলোমিটার অংশ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে প্রায় এক যুগ আগে পাকা করা হয়। বর্তমানে সড়কের বিভিন্ন জায়গা ভেঙে মাটি বেরিয়ে পড়েছে। ইট বালি আর পিচের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বড় বড় গর্ত আর ভাঙা সড়ক হিসেবে কেওয়া-টেপিরবাড়ী সড়কটি পরিচিতি পেয়েছে।

 

স্থানীয় শিক্ষক নূরুল আলম বলেন, এ সড়ক দিয়ে আশপাশের প্রায় চার গ্রামের শিক্ষার্থীরা উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করে। তাদের দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে হয়। তা ছাড়া বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের উপজেলা সদরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে এ সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। এতে তারা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং অপেক্ষাকৃত বয়ষ্ক লোকেরা অসুস্থ হয়ে যায়।

 

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, কেওয়া বাজার-আনসার টেপিরবাড়ী সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একাধিকবার ইট-সুরকি সড়কের গর্তে ফেলে ভরাট করে জনদুর্ভোগ কমানোর চেষ্টা করছি। শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর সড়কটি সংস্কারের আবেদন দেয়া আছে।

 

শ্রীপুর পৌরসভার প্রকৌশলী হারুন-অর রশীদকে ঈদের পর তিন দিন তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী এ জেড এম রাকিবুল আহসান বলেন, আপাতত বরাদ্দ না থাকায় সড়কটি সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। বরাদ্দ আসা মাত্রই সড়কটি সংস্কারে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version