-->
শিরোনাম

সৈয়দপুরে বিদ্যুৎ মিলছে এক তৃতীয়াংশ, লোডশেডিং চরমে

সৈয়দপুর (নীলফামারী)
সৈয়দপুরে বিদ্যুৎ মিলছে এক তৃতীয়াংশ, লোডশেডিং চরমে
নর্দার্ন ইলেকট্র্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) সৈয়দপুর অফিস

দেশের অন্যতম শিল্পনগরী ও উত্তরের সমৃদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র নীলফামারীর সৈয়দপুরে চাহিদার তিন ভাগের মাত্র একভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে চরম লোডশেডিং চলছে। ফলে ভয়াবহ ভোগান্তি পোহাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে শিল্প কল-কারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

 

নর্দার্ন ইলেকট্র্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন থেকেই চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। বুধবার কেন্দ্র থেকে ৩০ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে বরাদ্দের মাত্র ১২ মেগাওয়াট। মঙ্গলবারও একইভাবে অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। দিনরাত এভাবে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সব ধরনের উৎপাদন কার্যক্রম।

 

সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর বিভিন্ন শিল্প-কারখানাসহ শহরের পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা রপ্তানিমুখি মেশিনারি পণ্য, যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী শতাধিক লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও ঝুট কাপড় থেকে পোশাক তৈরিকারী দুই শতাধিক ক্ষুদ্র গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এর সাথে অন্যান্য কারখানাও ধুকছে। অর্ধ শতাধিক বেকারি, জুতা তৈরির দোকান, পাটজাত পণ্য নির্মাণ কারখানা, পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে গুলের কৌটা ও খেলনা বানানোর ফ্যাক্টরিও স্থবির হয়ে পড়েছে। সেইসাথে আবাসিক বিদ্যুতের অভাবে প্রখর রোদের কারণে সৃষ্ট তাপপ্রবাহে জনজীবনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দেখা দিয়েছে। বাসাবাড়ি, অফিস, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গরমে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। দাপ্তরিক কাজসহ গৃহস্থালি কাজেও সমস্যা হচ্ছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নেই গ্রাহক। ব্যাটারিচালিত চার্জার ভ্যান, রিকশা, অটো, ইজিবাইক বিদ্যুৎ না পেয়ে চার্জ করতে পারেনি। এ কারণে গাড়ি বের করা সম্ভব হয়নি। ফলে উপার্জন বন্ধ হয়ে উপোষ করার অবস্থায় অনেক চালক।

 

সবচেয়ে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে বয়ষ্ক, শিশু, শিক্ষার্থী আর রোগীদের। বাসাবাড়িতে অবস্থান করলে আইপিএস বা চার্জার লাইট বা ফ্যান চালিয়ে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। চার্জ করার মতো সামান্য সময়ও বিদ্যুৎ মিলছে না। এতে শিশুসহ বয়ষ্ক এবং অসুস্থ নারী-পুরুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

 

এদিকে, ক্লাস চলাকালে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে ঘেমে দুর্বিষহ কষ্ট করতে হচ্ছে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের। অনেকে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হচ্ছেন। অন্যদিকে হাসপাতালে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার অসহ্য ভোগান্তিতে পোহাচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন। অনেকে রাতে হাসপাতাল ছেড়ে অন্ধকারেই বাড়ি ফিরেছেন। কোনো কোনো রোগী বিছানা ছেড়ে ছাদে ও ভবনের বাইরে গাছের নিচে বসে রাত কাটিয়েছেন। এ সংক্রান্ত ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

 

গার্মেন্টস কারখানা এমআর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও সৈয়দপুর রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান দুলু বলেন, করোনা-পরবর্তী সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সৈয়দপুরের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার মালিকরা যখন আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই লোডশেডিং বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে।

 

নেসকো সৈয়দপুর অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান ভুইঞা জানান, সৈয়দপুরে প্রতিদিনের বিদ্যুতের চাহিদা ৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু আজ কেন্দ্রীয়ভাবে সৈয়দপুরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১২ মেগাওয়াট। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি ঘাটতি। তাই সারাদিন লোডশেডিং চলছে।

 

তিনি বলেন, সৈয়দপুর নেসকো বিদ্যুৎ উৎপাদন করে না। কেন্দ্র থেকে যা পায় তা-ই বিতরণ করে। বরাদ্দ পেলেই পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে। কবে নাগাদ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এবং কেন এই ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট কিছুই জানাতে পারেননি।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version