অনাবৃষ্টির কারণে পাট ও ধান নিয়ে সংকটে চাষিরা

রাজশাহী ব্যুরো
অনাবৃষ্টির কারণে পাট ও ধান নিয়ে সংকটে চাষিরা
রাজশাহীতে পাট কাটায় ব্যস্ত কৃষক

রাজশাহীতে বেড়েছে পাটের চাষ। গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় পাট চাষ বেড়েছে ৪৪২ হেক্টর জমিতে। এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পাট জাগ দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। একই অবস্থা ধান চাষের ক্ষেত্রেও।

 

অনাবৃষ্টির কারণে পাট ও ধান নিয়ে উভয় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এখনো পাট কাটা শুরু হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে পুরোদমে কাটা শুরু হবে। তবে গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর চাষের পরিমাণ বেড়েছে।

 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রাজশাহী জেলায় পাট চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমিতে। এ বছর রাজশাহী জেলায় পাটের চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে জেলার মতিহার থানা এলাকায় ১০ হেক্টর, বোয়ালিয়া এলাকায় ১ হেক্টর, পবায় ২ হাজার ২৬৫ হেক্টর, মোহনপুরে ৯০ হেক্টর, বাগমারায় ১ হাজার ৭১০ হেক্টর, দুর্গাপুরে ১ হাজার ৭১৪ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৪ হাজার ৪৬০ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ৮৯০ হেক্টর, চারঘাটে ৩ হাজার ৩৯৫ হেক্টর ও বাঘায় ৫ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে।

 

পাট চাষি লিয়াকত আলী বলেন, গত বছর ৩ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছিলাম। বিক্রি করে ভালো দামও পেয়েছি। তাই এ বছর ৭ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। এখনো পাট কাটা শুরু করিনি। এই ইউনিয়নে আগামী ১৭ জুলাই নির্বাচনের পরে পাট কাটব।

 

তিনি আরো বলেন, পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। পাট কাটারও সময় হয়েছে। অনেকেই পাট কেটেছে। কিন্তু খালবিলে পানি নেই। তাই অনেকেই পাট কাটতে পারছে না। আমি ১০ কাঠা জমির পাট কেটেছি। অপেক্ষায় আছি বাড়ির পাশের খাল পানিতে ভড়াট হলে বাকি পাট কাটা শুরু করব। রাব্বি হোসেন নামে এক পাট চাষি জানান, তার জমিতে পাট আছে। পাট কেটে সেই জমিতে ধান লাগাবেন তিনি।

 

এদিকে বীজ তলায় চারা প্রস্তুত। কিন্তু পানির অভাবে পাট কাটতে পারছেন না। একই কারণে ধানো লাগাতে পারছেন না। ফলে উভয় সংকটে পড়েছেন তিনি। তার বাড়ির পাশের খালে পানি থাকলেও পাট জাগ দেয়ার মতো পানি জমে নেই বলে জানান তিনি। পাট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, পাট জাগ দিতে পানির প্রয়োজন হয়। পানি ছাড়া পাট জাগ দেয়া যায় না।

 

এবছর রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে পুকুর, খালে পানি নেই। তাই পাট কাটতে পারছেন না কৃষকরা। তবে নিচু এলাকাগুলোর পাটের জমিতে পানি জমেছে। সেগুলো কেটে সেখানেই জাগ দিচ্ছেন চাষিরা। তিনি আরো জানান, কয়েক বছর থেকে পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা।

 

গত বছর অনেক চাষি মৌসুমের শেষে পাট বিক্রি করেন। ফলে তুলনামূলক ভালো দাম পেয়েছেন। আমাদের রাজশাহীতে সরকারি পাটকল বন্ধ থাকলেও বেসরকারি বেশ কয়েকটি পাটকল রয়েছে। এই পাটকলগুলোর প্রতিনিধিরা পাট কিনে থাকেন। এছাড়া বেশির ভাগ পাট রাজশাহীর বাইরে চলে যায়।

 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে গত বছরের চেয়ে পাট চাষ বেড়েছে। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে এখনো রাজশাহীতে সেইভাবে পাট কাটা শুরু হয়নি। সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে পাট কিছুটা বেড়েছে। তবে খাল-বিলে পাট জাগ দেয়ার মতো পানি নেই। আশা করা হচ্ছে বৃষ্টিপাত হলে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে পুরোদমে পাট কাটা শুরু হবে।

 

তিনি আরো বলেন, বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে আমন ধান লাগাতে ধীর গতি। কারণ অনেকেই পাট কেটে জমিতে ধান লাগাবেন। তাদের পাটের কারণে ধান লাগানো আটকে আছে। এছাড়া যে সব জমিতে পাট ছিল না, চাষিরা সে জমিগুলোতে ইতোমধ্যে ধান লাগিয়েছেন। অনেক ধান ও পাট চাষি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছেন। আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হলে একদিকে কাটা পড়বে পাট অন্যদিকে লাগানো হবে আমন ধান।

 

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হয়নি। এ বছর তুলনামূলক রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। বর্ষার সময় এখনো আছে। আশা করা যাচ্ছে বৃষ্টিপাত হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য