-->
শিরোনাম

চায়না দুয়ারির অবাধ ব্যবহার, মাছশূন্য হচ্ছে পদ্মা-বড়াল

রাজশাহী ব্যুরো
চায়না দুয়ারির অবাধ ব্যবহার, মাছশূন্য হচ্ছে পদ্মা-বড়াল
চারঘাটে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালে মাছ শিকার করছেন জেলেরা

চায়না দুয়ারি জালের অবাধ ব্যবহারের কারণে পদ্মা ও বড়াল নদী মাছশূন্য হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ডালিপাড়া গ্রাম। ওই গ্রামের বাসিন্দা আজমল হোসেন প্রায় ৫০ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বাঁশ ও বেত দিয়ে চাঁই, পলো, দুয়ারিসহ মাছ ধরার দেশীয় ফাঁদ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

 

কিন্তু গত তিন-চার বছর তিনি আর মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করেন না। কারণ ‘মাছের যম’ চায়না দুয়ারি জাল বাজারে আসায় স্থানীয় কারিগরদের তৈরি মাছ ধরার ফাঁদের চাহিদা নেই।

 

আজমল হোসেন জানান, কয়েক বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে যখন নদীতে পানি আসত, তখন বাঁশ বেতের ফাঁদ তৈরির কাজে দম ফেলার ফুরসত পেতেন না তিনি। কিন্তু চায়না দুয়ারি নামে একটি নিষিদ্ধ জাল বাজারে আসার পর সব শেষ। চায়না দুয়ারির জালে সহজেই বেশি মাছ ধরা যায়। তাই মানুষ এখন বাঁশের ফাঁদ কিনতে চায় না। বাধ্য হয়ে এ বছর থেকে পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের কাজ করছেন।

 

উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কারেন্ট জাল ব্যবহার বন্ধে সরকার ও মৎস্য বিভাগ যখন হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক তখনই পদ্মা-বড়ালের মৎস্য সম্পদকে ধ্বংস করতে জেলেরা নির্বিচারে অধিক মাছ শিকারে চায়না দুয়ারি নামের নতুন এক বিশেষ ফাঁদ ব্যবহার করছেন।

 

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ জাল ব্যবহারে ভবিষ্যতে দেশি প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এ ধরনের ক্ষতিকর ফাঁদ ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগ বিভাগ আইন করে এ বছর থেকে চায়না দুয়ারি জাল নিষিদ্ধও করেছে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

 

উপজেলার পদ্মা নদীর গোপালপুর, পিরোজপুর, ইউসুফপুর, মুক্তারপুর ও রাওথা এলাকা এবং বড়াল নদীর উৎস মুখে গিয়ে দেখা যায়, শত শত ছোট ডিঙিনৌকা ও বড় নৌকা নদীর তীরের দিকে থেমে আছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, কী কারণে নৌকাগুলো অলস পড়ে আছে।

 

এসব নৌকার কাছে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে চায়না দুয়ারি জালের ফাঁদ পেতে মাছ শিকার করছে জেলেরা। চায়না দুয়ারির জালের ফাঁদে পোনা থেকে ডিমওয়ালা মাছও ধরা পড়ছে। এতে ক্রমেই মৎস্যশূন্য হয়ে পড়ছে পদ্মা,বড়ালসহ এগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত খাল-বিলগুলো।

 

পদ্মা নদীতে চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ শিকার করা রাশিদুল ইসলাম নামের এক জেলে বলেন, ‘এ ফাঁদে সব ধরনের মাছই আটকা পড়ে। আগে কারেন্ট জাল ব্যবহার করতাম, কিন্তু এখন চায়না দুয়ারি ব্যবহার করি। এ জালে কারেন্ট জালের চেয়ে খরচ কম, আয় বেশি। দুয়ারি জাল নদীতে ফেললে কখনও নিরাশ হতে হয় না।’

 

গোপালপুর এলাকার পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন জানান, বিকেল হলেই ছোট বড় অসংখ্য নৌকায় এসে জেলেরা নদীতে চায়না দুয়ারি ফেলেন। সারারাত নদীতে রাখার পর সকালে জাল তুললে সব ধরনের মাছ, জলজ প্রাণী; এমনকি মাছের ডিমও পাওয়া যায়। এ চায়না দুয়ারিতে ছেঁকে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়তো নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়া যাবে না।

 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চারঘাটে পদ্মা ও বড়াল নদীর ৭৬৭ হেক্টর জায়গায় মিঠা পানির দেশীয় মাছ ও প্রাকৃতিক জলজ প্রাণীর অভয়ারণ্য রয়েছে। তা থেকে প্রতি বছর ১ হাজার ৯১৭ টন দেশীয় মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে।

 

উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা ওয়ালিউল্লাহ মোল্লাহ বলেন, চায়না দুয়ারি এক ধরনের নিষিদ্ধ ফাঁদ। এটার মধ্যে রেণুপোনাসহ সকল মাছ ও জলজ প্রাণী আটকা পড়ে এবং এদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়। এ মৌসুম থেকে এ জাল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version