ময়মনসিংহ জেলার সর্বদক্ষিণের লাল মাটির উঁচু এলাকা ভালুকা উপজেলা। জাতীয় ফল কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলের জন্য বিখ্যাত এ অঞ্চল। শিল্পায়নের ছোঁয়ায় ফল ও ফসলি জমি কমলেও এখনো এ অঞ্চলে কাঁঠাল চাষ হয় ব্যাপকভাবে।
এবার ভালুকায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ অঞ্চলের কাঁঠাল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য উপযোগী হলেও সংরক্ষণ সংকটে তা করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় উৎপাদনকারীরা।
ভালুকার বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যাপক কাঁঠাল সরবরাহের কারণে বাজার জমে উঠেছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামেই প্রাকৃতিক উপায়ে কমবেশি কাঁঠাল চাষ হয়ে থাকে। এখানে কাঁঠালের বড় বাজার হবিরবাড়ীর সিড স্টোর বাসস্ট্যান্ড, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড, উথুরা বাজার, মল্লিকবাড়ী বাজার, বিরুনিয়া বাজার, কাচিনা বাজার, আঙ্গারগাড়া বাজার ও মাস্টারবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকা।
ভালুকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকা থেকে ঠেলাগাড়ি, রিকশা, অটো, গরু-মহিষের গাড়ি, পিকআপসহ বিভিন্ন বাহনে কাঁঠাল চাষি ও বেপারীরা আসেন এসব হাটবাজারে। এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে কাঁঠাল কিনে ট্রাকবোঝাই করে নিয়ে যান।
ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী, বাটাজোর ও মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদন হয়। এসব এলাকা ছাড়াও ভালুকা পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কাঁঠালের ব্যাপক ফলন হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী সিডস্টোর বাজারজুড়ে কাঁঠালের স্তূপ। থরে থরে সাজানো রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য কাঁঠাল। বাতাসে ছড়াচ্ছে কাঁঠালের সুঘ্রাণ। সকাল হতেই আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাঁঠাল এনে এই বাজারে জড়ো করেন চাষিরা।
কাঁঠালের পাইকারি বাজার এটি। বাটাজোর বাজারের শেডঘরে কাঁঠাল, উঠানে কাঁঠাল। বাজারের ছোট-বড় শেডঘর ও বাজারজুড়ে কাঁঠাল আর কাঁঠাল। শুধু স্তূপ করা কাঁঠালই নয়; কাঁধে, মাথায় আবার কেউ কেউ রিকশায় করে কাঁঠাল নিয়ে বাজারে আসছেন।
নারায়ণগঞ্জের কাঁঠালের পাইকার মজিবুর রহমান বলেন, সোনারগাঁও, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, সিলেট, মুন্সীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ভালুকার কাঁঠালের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
উপজেলার হবিরবাড়ী বাজারের আড়তদার আবু আরফান মিয়া জানান, তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে কাঁঠাল বেচাকেনা করছেন। কাঁঠালের সাইজ বুঝে দাম। ছোট কাঁঠাল ৩০ টাকা পর্যন্ত আর বড়গুলো ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা আসেন এই হাটে।
এ ছাড়া নোয়াখালী, সিলেট, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গাড়ির মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। যদি কাঁঠালের জন্য হিমাগার থাকত, তাহলে কাঁঠাল সংরক্ষণ করে রাখা যেত।
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেসমিন জাহান ভোরের আকাশকে জানান, ভালুকা অনেক আগে থেকেই কাঁঠাল চাষের জন্য বিখ্যাত। গত বছর ভালুকায় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫ হাজার ৬০০ টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা আরো বাড়বে।
তিনি আরো বলেন, কাঁঠালকে যদি আমরা ফুড প্রসেসিংয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে কাঁঠাল চাষে কৃষকদের আগ্রহ আরো বাড়বে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য