বাংলাদেশের যতগুলো ঐতিহাসিক দীঘি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কালু শাহ বা কালশার দীঘি। কালু শাহর দীঘিটি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার অন্তর্গত লংগাইর ইউনিয়নে অবস্থিত।
কালু শাহর দীঘিটি ষোড়শ শতকে সেকান্দর শাহের ছেলে ফরিদ শাহের ছোট ভাই কালু শাহ গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার অন্তর্গত লংগাইল ইউনিয়নের মাইজবাড়ীতে তার বাড়ির সামনে প্রায় চৌদ্দ একর জমিজুড়ে এ পুকুর খনন করেন। কালু শাহর তিন ভাই ছিলেন, কালু শাহ, ফরিদ শাহ, মানিক শাহ। তারা অসংখ্য অনুসারী নিয়ে এ এলাকায় ধর্ম প্রচারের জন্য আসে।
তৎকালীন সময়ে এলাকাবাসীর সুপেয় পানির খুবই সংকট ছিল। সুপেয় পানির অভাব মেটাতে তিনি এই সুবিশাল দীঘিটি খনন করেন। যা কালু শাহর দীঘি নামে পরিচিত। এ দীঘিটি এখনো পূর্বাবস্থায় বহাল রয়েছে। এ পুকুরের চারপাশে রয়েছে আরো ১০ একর জমি। পুকুর এবং পুকুরের আশপাশের জমিসহ মোট ২৪ একর জমি রয়েছে এখানে।
পুকুরে রয়েছে শত বছরের কাছিম, গুইসাপ, পানকরিসহ নানা প্রজাতির পাখি। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে মানুষকে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমায় ঐতিহাসিক দীঘিটি দেখতে। প্রতিদিন ভ্রমণ পিপাসুদের উপস্থিতি বাড়ছে এ এলাকায়।
কালু শাহের শাহ গফরগাঁও উপজেলার উস্থি ইউনিয়নের বড়বাড়িতে ২টি দূর্গ স্থাপন করেছিলেন। তারা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এবং তার অনুসারীদের নিয়ে এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। এক সময় দিল্লির সুলতানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন বলে জানা যায়। সংবাদ শুনে দিল্লি সুলতান ক্ষিপ্ত হয়ে কালু শাহর মাথা কেটে আনার জন্য সৈন্য প্রেরণ করেন।
এক পর্যায়ে দিল্লির সুলতানের সৈন্যদের সঙ্গে ভীষণ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ যুদ্ধে কালু শাহ নিহত হন। যুদ্ধ শেষে সৈন্যরা সুলতানের আদেশ মতো কালু শাহর মাথা কেটে দিল্লি নিয়ে যায়। কালু শাহর মাথাহীন দেহ পুকুরপাড়ে সমাহিত করা হয়। কালু শাহর সমাহিত স্থানে তার নামে মাজার স্থাপন করা হয়। কালু শাহর সমাহিত স্থানটি চারশত বছরের পুরোনো চুনাপাথর দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
এলাকার মানুষসহ লংগাইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন বিপ্লব পুকুরের চারপাশ ঘিরে নান্দনিক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। এবং নতুন প্রজন্মকে আহব্বান জানান এ ঐতিহাসিক স্থানটি দেখার জন্য।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য