-->
শিরোনাম

পাহাড়ের টক-মিষ্টি লটকন, কম পরিশ্রম অধিক আয়

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
পাহাড়ের টক-মিষ্টি লটকন, কম পরিশ্রম অধিক আয়
পাহাড়ের গাছে গাছে ঝুলছে লটকন

টক-মিস্টি ফল লটকন এক সময় পাহাড়ের ঢালুতে আর খালের পাড়ে চোখে পড়লেও সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ের বিভিন্ন জনপদে দিনের পর দিন ব্যাপক হারে চাহিদা বাড়ছে টক-মিষ্টি এ ফলটির। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে দেশের সমতলের বিভিন্ন জেলাতেও লটকনের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। আম-লিচু চাষে পরিচর্যাসহ মোটা অঙ্কের পুঁজি লাগলেও লটকন ফলে কোনো পুঁজি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।

 

ফলে কম পরিশ্রমে অধিক আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে ফলটি। তবে পাহাড়ে আম-লিচুর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হলেও বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ থেকে পিছিয়ে আছে লটকন। আম-লিচু চাষে পরিচর্যাসহ মোটা অঙ্কের পুঁজি লাগলেও লটকন ফলে কোনো পুঁজি বা আলাদা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।

 

ফলে কম পরিশ্রম আর পুঁজিতে অধিক আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে ফলটি। স্থানীয় বাঙালিরা ফলটিকে লটকন নামে চিনলেও চাকমা ভাষায় ‘পচিমগুল’, মারমা ভাষায় ‘ক্যানাইজুসি’ ও ত্রিপুরা ভাষায় ‘খুচমাই’ নামে পরিচিত সুমিষ্ট এ ফল।

 

জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে পাকতে শুরু করে লটকন। একই সময়ে বাজারেও আসতে শুরু করে ফলটি। এটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল একটি কৃষিপণ্য। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ডালে থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায় ‘লটকন’ ফল। টক-মিষ্টির লটকন ছোট-বড় সকলের কাছেই অতি প্রিয়।

 

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, রামগড়, দীঘিনালা, গুইমারা ও পানছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে স্বল্প-পরিসরে অথবা ব্যক্তি উদ্যোগে লটকনের চাষাবাদ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। বর্তমানে এটি স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ৬০/৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনা আর পাহাড়ের ঢালুতে গাছে গাছে ঝুলছে লটকনের সোনালী রঙের থোকা। মাটিরাঙ্গার নবীনগর গ্রামের মো. চান মিয়ার বাড়ির পাশেই পাহাড়ের ঢালুতে মাঝারি আকারের প্রায় অর্ধ-শতাধিক লটকন গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে লটকনের ব্যাপক ফলন হয়েছে।

 

বিগত বছরের তুলনায় এ বছর লটকনের ফলন কম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফলন কম হলেও বিনা প্ররিশ্রমে তা খুব কম নয়। ইতোমধ্যে স্থানীয় পাইকাররা লটকন কিনতে আসতে শুরু করেছেন। দাম-দরও জানতে চাইছেন। এক একটি গাছের লটকন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান তিনি। কথা হয় দুর্গম পাহাড়ি পাড়া তৈাকাতাং থেকে মাটিরাঙ্গা বাজারে লটকন বিক্রি করতে আসা অনিল বিকাশ ত্রিপুরার সঙ্গে।

 

তিনি জানান, তার বাড়ির আশপাশে অন্তত ৩০টি গাছে লটকন ধরেছে। এ বছর লটকন বিক্রি করে তিনি লাখ টাকা আয় করবেন। স্থানীয় বাজার মূল্যেও সন্তুষ্ট এ লটকন চাষি।

 

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে পার্বত্য পার্বত্য খাগড়াছড়ির প্রায় সকল উপজেলাতেই ব্যাক্তি উদ্যোগে কমবেশি লটকন চাষ হচ্ছে। লটকনের ফলনো ভালো হয়েছে। অধিক পরিমাণে গাছপালা ও ছায়া থাকায় পাহাড়ি এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কম পুঁজি ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে বলেও মনে করেন তিনি।

 

সরকারিভাবে লটকন ফলকে পরিচিত করার দাবি জানিয়ে স্থানীয় চাষিরা বলেন, এখনো আমাদের দেশের অনেক জেলায় এ ফলটির সঙ্গে মানুষের পরিচয় হয়নি। সরকারি উদ্যোগে দেশ-বিদেশে টক-মিষ্টি সুস্বাদু এ ফলটির গুণাগুণ তুলে ধরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করলে হয়তো বিশ্ব বাজারে নিজের জায়গা করে নেবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version