ভারি বৃষ্টি হলে বা পাহাড়ি ঢল নামলেই তলিয়ে যায় সেতুর সংযোগ সড়ক। ফলে সড়ক পথে তাহিরপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকে মাসের পর মাস। প্রতি মৌসুমেই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাহিরপুরসহ তিন উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষকে।
জেলার বিশ্ব ম্ভরপুর, তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র পথ তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক। তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জ সড়কটির দৈর্ঘ্য ৩৩ কিলোমিটার। সড়কের তাহিরপুর অংশে আনোয়ারপুর বাজার থেকে বালিজুরী গ্রাম পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা সেতুর সংযোগ থেকে ভাটিপাড়া মোকাম পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক জেলা এলজিইডির আওতায়।
অবশিষ্ট ২৫ কিলোমিটার রাস্তা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের। মোট ৩৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে দুই উপজেলার ১০ কিলোমিটার সড়কের তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ার সেতুর পূর্ব পাশের সংযোগ ৫০ মিটার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা বাজারের পূর্ব পাশে ১০০ মিটার ও দুর্গাপুর মোকাম বাড়ি এলাকায় ১০০ মিটার সড়ক নিচু রাখা হয় পাহাড়ি ঢলের পানি নিষ্কাশনের জন্য।
পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে যাওয়ার পরও সড়কের ওই তিনটি স্থানের মধ্যে মোকাম বাড়ি এবং শক্তিয়ারখলার পূর্ব পাশের সড়ক দুটি পানিতে নিমজ্জিত থাকে কয়েক মাস। ফলে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা পর্যটকরা পড়েন ভোগান্তিতে। বিভিন্ন স্থানে পরিবহন বদল করে তাদের আসা-যাওয়া করতে হয়। এখানে আসা পর্যটক আদনান জুবাইদ জানান, বর্ষাকালে এ রাস্তাটিতে পানি থাকার কারণে অনেক পর্যটক গাড়িতে করে সরাসরি তাহিরপুর না এসে সুনামগঞ্জ থেকে হাউসবোটে করে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা-যাওয়া করেন। এতে করে তাদের নৌকাতে অতিরিক্ত ৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়।
স্থানীয় লোকজন ও এ সড়কে চলাচলকারীরা জানান, হাওরের পানির লেভেল সড়ক থেকে অনেকটা ওপরে থাকার কারণে ঢলের পানি নেমে যাওয়ার পরও সড়কটি তলিয়ে থাকে। ফলে এ পথে ভেঙে ভেঙে নৌকা করে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর জানান, সড়কটিকে কমপক্ষে দুই ফুট উঁচু করতে হবে। পাশাপাশি দু’একটি বক্স কালভার্ট করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলে এ সমস্যা থাকবে না।
অটোরিকশা চালক বিজন দাস জানান, পথে তিন স্থানে পানি থাকার কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে সরাসরি সুনামগঞ্জ যাতায়াত করা যাচ্ছে না। দুর্গাপুর মোকাম বাড়ির সামনের সড়কে এখনো ৪ ফুটের মতো পানি আছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মেরুয়াখলা গ্রামের শিক্ষক আসিকুর রহমান জানান, বিশ্বম্ভরপুর সদর থেকে তাহিরপুরের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। বর্ষাকালে প্রায়ই দু’বার নৌকা পরিবর্তন করে পারাপার হতে হয়। তবে পুরান জাদুকাটা নদীর মুখে ড্যাম নির্মাণ করায় ঢলের পানির চাপ অনেকটা কমে এসেছে।
তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন জানান, সড়কের তিনটি স্থানে প্রায় ৩শ মিটার সড়ক বেশি নিচু। পাহাড়ি ঢলের পানি হাওরে নেমে গেলেও সড়কের ওই স্থানগুলো ডুবে থাকে মৌসুমজুড়ে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের। পানি নামার জন্য পথ করে দিতে সড়ক নিচু রাখা হয়েছে। তবে কীভাবে এই ভোগান্তি দূর করা যায় এ নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য