ভোলার লালমোহনে একের পর এক দুর্র্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি একটিসহ গত দেড় মাসে উপজেলার কালমা ইউনিয়নেই ৬টি বসতঘরে ডাকাতি হয়েছে। এসব ডাকাত দলের টার্গেট বিত্তশালী ও প্রবাসী পরিবার। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিত্তশালী ও প্রবাসী পরিবারগুলো।
বৃহস্পতিবার রাতে কালমা ইউনিয়নের আলম বাজার এলাকায় নতুন করে ঘটেছে আরো একটি ডাকাতির ঘটনা। ৮ সদস্যের মুখোশধারী ডাকাতের একটি দল হানা দেয় ওই এলাকার আনোয়ার হোসেন নামের এক স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে। এ সময় ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৫ লাখ টাকা নিয়ে যায় ডাকাত দল।
শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মোমেনা হক বলেন, আমার স্বামী বৃহস্পতিবার বরিশাল অবস্থান করছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে জানালার গ্রিল ভেঙে মুখোশধারী ৭-৮ জনের একটি দল ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকে তারা ঘরের সবার হাত এবং চোখ বেঁধে একটি রুমে আবদ্ধ করে রাখেন। ওই ডাকাত দলের সদস্যরা ঘরের আলমারির চাবি চায়। চাবি না দিলে তারা আমাকে মারধর করে।
এরপর তারা নিজেরাই চাবি খোঁজ করে বের করে ঘরে থাকা ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৫ লাখ টাকা নিয়ে যায়।ডাকাতির খবর পেয়ে বরিশাল থেকে বাসায় ফিরেন শিক্ষক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করব।
জানা যায়, এর আগে একই ইউনিয়নের মধ্য কালমা এলাকায় গত ২৯ মে ইসমাইল কবীর নামে এক সৌদি প্রবাসীর ঘরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় ডাকাত দল ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে যায়। এরপর গত ১৭ জুন ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটে আরো একটি ডাকাতির ঘটনা। এ সময় ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষক নকিব মৃধার ঘর থেকে ডাকাত দল নিয়ে যায় ১৬ ভরির মতো স্বর্ণালংকারসহ নগদ ৭০ হাজার টাকা।
এর মাত্র ৫ দিনের মাথায় ২২ জুন কালমা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বগিরচর এলাকায় আকতার হোসেন নামে মালয়েশিয়া প্রবাসীর ঘরে আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাত দল নিয়ে যায় ১২ ভরির মতো স্বর্ণালংকার এবং নগদ ত্রিশ হাজার টাকা।
ঘটনার আবার শুরু হয় জুলাই মাসে। এ মাসের ১০ তারিখে কালমা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আক্তার হোসেন নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ীর ঘর ডাকাতি হয়। এ সময় ডাকাত সদস্যরা নিয়ে যায় নগদ ৫০ হাজার টাকাসহ আড়াই ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার। এ ঘটনার পরদিন ১১ জুলাই রাতে কালমা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মীরা বাড়িতে ৩টি বসতঘরে এক সঙ্গে ঘটে ডাকাতির ঘটনা। ডাকাতির কবলে পড়েন ওই বাড়ির মিজান, শফিকুল ইসলাম এবং রফিক। এই তিনজনের বসতঘর থেকে নগদ ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং ৭ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় ডাকাত চক্র। এসব ডাকাতির ঘটনা ঘটে গভীর রাতে।
এদিকে ইউনিয়নে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কালমা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আকতার হোসেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও মামলা হয়েছে একটি। বাকিগুলোতে কেবল চুরির মামলা নেয় পুলিশ। আবার আসামি গ্রেপ্তারেও তৎপরতা নেই পুলিশের। পুলিশ আন্তরিক হলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটত না।
এসব ডাকাতির বিষয়ে লালমোহন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জহুরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, এর আগে একটি ডাকাতির ঘটনায় মামলা নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায়ও মামলা নেয়া হবে। পুলিশ আসামি গ্রেপ্তারসহ ঘটনা অনুসন্ধানে সচেষ্ট রয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য