বৃষ্টিহীন শ্রাবণে চৈত্রের মতো খরতাপে পুড়ছে যশোর। তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। থমকে আছে বৃষ্টিনির্ভর চাষাবাদ। অসময়ের অতি গরমে বাড়ছে রোগব্যাধি।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত দুই দশকে এমন বৃষ্টিহীন বর্ষাকাল দেখা যায়নি। সোমবার যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৮ ডিগ্রি। এ সময়ে যশোরে গড় বৃষ্টিপাত থাকে ৮০ থেকে ৯০ মিলিমিটার। সে তুলনায় এখন বৃষ্টি নেই বললেই চলে। জুন মাসে গড় বৃষ্টিপাত ৫ থেকে ১০ মিলিমিটার।
এ বছর যশোর অঞ্চলে সর্বোচ্চ বৃষ্টি ছিল ৫৯০ মিলিমিটার (জুনে) এবং সর্বনিম্ন ছিল ২১ মিলিমিটার। আষাঢ়ের শেষে ও শ্রাবণের শুরুতে নেই বৃষ্টির দেখা।
ভরা বর্ষা মৌসুম চললেও তাপ সহ্য করতে হচ্ছে গ্রীষ্মের মতো। আকাশে নেই মেঘ। গত কয়েক দিনের উষ্ণতায় অতিষ্ঠ জনজীবন। গুমোট আবহাওয়া। বাতাসে আর্দ্রতা কম। গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকের ক্ষেত পানিশূন্য। কৃষক ধানের চারা রোপণ করতে পারছে না। সময়মতো বীজতলা তৈরি করতে না পারায় ধান রোপণে বিলম্ব হচ্ছে। যারা সেচ দিয়ে বীজতলা তৈরির চেষ্টা করছেন তারা তাপের কারণে হিমশিম খাচ্ছেন। পাট জাগ দিতেও পারছে না কৃষকরা।
জেলার চৌগাছা উপজেলার কৃষক আয়নাল বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেত পানিশূন্য। ধানের চারা রোপণ করতে পারছি না। সময় মতো বীজতলা তৈরি করতে না পারায় ধান রোপণেও বিলম্ব হচ্ছে। ঝিকরগাছার পাট চাষি আফজাল হোসেন বলেন, এবার শ্রাবণ মাসেও চৈত্র মাসের মতো গরম। কোনো বৃষ্টি নেই। ফলে পাট পচানোর পানির অভাব। কোথায় কি করব বুঝতে পারছি না।
উষ্ণায়ন বৃদ্ধির বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রফেসর ড. সাইবুর রহমান মোল্যা বলেন, গত কয়েক বছর বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে যশোরে দিনদিন পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষি জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়ছে। কারণ নদী বা জলাশয়ের পানি প্রবাহ না থাকায় এ পানিতে ডেঙ্গু বাড়ছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মনজুরুল হক বলেন, যশোরে সদরের কিছু জায়গায় এবং বাঘারপাড়ায় বৃষ্টি অনেক কম হয়েছে। ফলে এসব জায়গায় এখনো বীজতলাও করতে পারিনি। আর এ অঞ্চলের রোপা আমন করা হয় সাধারণত আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। বৃষ্টি না হলে সেচ দিয়ে রোপা আমন করতে হবে। যার ফলে কৃষকের খরচ বেড়ে যাবে।
এছাড়া আমন ধান দেরিতে রোপণের ফলে সরিষার চাষ করা কৃষকের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। পাট পচানোতে সমস্যা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য