হালুয়াঘাটে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
হালুয়াঘাটে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটে বর্ষা মৌসুমে ছোট-বড় নদনদী এবং খালবিল পানিতে টইটম্বুর থাকে। আর এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তোলে ছোট-বড় নানা ধরনের নৌকা। প্রতি বছর এ সময় নিজেদের নৌকা ঠিকঠাক করাসহ নতুন নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন উপজেলার নৌকার কারিগররা।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর থেকে আঁকাবাঁকা সড়ক পাড়ি দিয়ে গ্রামের পথ ধরে প্রায় ১২ কিলোমিটার ভেতরে বিলডোরা ইউনিয়নের দাড়িয়াকান্দি গ্রাম। সেখানে ভোর থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নৌকার কারিগর। কেউ কাঠে খটখট শব্দের তালে পেরেক ঠুকছেন, আবার কেউ কাঠ কাটা বা চেরাই নিয়ে ব্যস্ত। কেউ আবার নৌকার তলা তৈরিতে কাঠ বিছিয়ে দিচ্ছেন। গুনগুন করে ভাটিয়ালি গান ধরছেন কেউ কেউ, সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন বাকিরাও।

 

কারিগররা জানান, একটি মাঝারি আকারের নৌকা তৈরিতে তিন দিন সময় লেগে যায় তাদের। আগে নৌকা তৈরির গাছ অল্প টাকায় পাওয়া যাওয়ায় কম টাকায় বিক্রি করতেন তারা। এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাঠও তেমন পাওয়া যায় না। এখন রেইনট্রি, জারুল, ইউক্যালিপটাস কাঠের নৌকা তৈরি করেন তারা।

 

বিলডোরা এলাকার নৌকার কারিগর খাইরুল ইসলাম জানান, তার বাবা হামিদ মিস্ত্রিও নৌকার কারিগর ছিলেন। এখনো এ এলাকায় হামিদ মিস্ত্রির বেশ নামডাক রয়েছে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে নৌকার অনেক চাহিদা। যারা ধান ও পাট চাষ করেন, তাদের নৌকা ছাড়া চলে না। বিল, নদীনালা থেকে মাছ ধরতে জেলেরাও নৌকার অর্ডার দিয়ে থাকেন। আমি বর্ষা মৌসুমে নৌকা বানাই আর বাকি সময় অন্য কাজ করি। এখানকার নৌকা ভালো বেচাবিক্রি হয়।

 

নৌকার কারিগর, স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীবেষ্টিত এ হালুয়াঘাট উপজেলায় রয়েছে কংস, ভোগাই, দর্শা, গাংগিনা, শেওলা, মেনংছড়াসহ বেশ কয়েকটি ছোট-বড় নদী। এ ছাড়া জামবিল, কলমি বিলসহ বেশ কিছু বিল। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। তাই অনেক আগে থেকেই হালুয়াঘাটের মানুষর চলাচলের প্রধান বাহন ছিল নৌকা। নিজেদের প্রয়োজনেই এখানকার মানুষ নৌকা বানানো শিখে নিয়েছিলেন।

 

তৈরির দক্ষতা ও সৌন্দর্যের কারণে এ এলাকার নৌকার আলাদা কদরো রয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা থেকে ক্রেতারা এখানকার বিভিন্ন হাটে আসতেন নৌকা কেনার জন্য। তবে আগের মতো সারা বছর পানি না থাকায় এবং বিভিন্ন নদনদী, খালবিল দখল করে ভরাট করে ফেলায় এখন শুধু বর্ষা মৌসুমেই নৌকার বিষয়গুলো চোখে পড়ে।

 

বিলডোরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবজাল হোসেন খান বলেন, বর্ষা মৌসুম এলে আমাদের এখানে বিলডোরা দাড়িয়াকান্দাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় নৌকা তৈরি শুরু করে কারিগররা। এখানকার নিচু অঞ্চলগুলোতে নৌকার খুব চাহিদা আছে। নৌকা তৈরির কারিগরদের কোনো ধরনের সাহায্যের দরকার হলে আমরা তাদের পাশে থাকব। কারণ নৌকা দিয়েই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য