-->
শিরোনাম

শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পানতোয়া

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পানতোয়া
বাঁশতলা বাজারের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পানতোয়া

সিরাজগঞ্জে শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পানতোয়া। আজও এ মিষ্টির মান ধরে রেখেছেন কারিগররা। দুধের ছানা ঘিয়ে ভেজে রসে ডুবিয়ে বানানো হয় এ মিষ্টি। চিনি ও পানির পাতলা রসে ভিজিয়ে তৈরি বলে নাম হয়েছে পানতোয়া। জেলার চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর পশ্চিম তীরের এনায়েতপুর গ্রামের বাঁশতলা বাজারে পাওয়া যায় এই মিষ্টি।

 

জিভে জল আনা পানতোয়াকে অবশ্য স্থানীয় লোকজন ‘বাঁশতলার পানি তাওয়া’ বলেন। উৎসব-পার্বণে এখানকার মানুষের ঘরে পানতোয়া থাকবেই। পানতোয়ার সুনাম ছড়িয়েছে দেশের অন্যান্য এলাকার মিষ্টিপ্রিয়দের মধ্যেও।

 

এনায়েতপুর বাঁশতলা বাজার এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় শত বছর আগে যমুনাপারের স্থলপাকরাশী বাজারে গণেশ মোদক নামের এক মিষ্টি ব্যবসায়ী দুধের ছানা তেলে ভেজে ছানার জিলাপি বানাতেন। পরে এক সময় সেই ছানা লম্বা আকার করে ঘিয়ে ভেজে রসে ডুবিয়ে বানান নতুন ধরনের মিষ্টি পানতোয়া। তেলের বদলে ঘিয়ে ভাজা হয় বলে তখন থেকেই মিষ্টির ঘ্রাণটা অন্যরকম হয়ে ধরা দেয় ভোজনরসিকদের কাছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এই মিষ্টি স্বাদে-ঘ্রাণে সবার প্রিয় হয়ে ওঠে।

 

৮০ গ্রাম ওজনের একটি পানতোয়া মিষ্টি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পানতোয়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। যমুনার ভাঙনে চৌহালী উপজেলার স্থলপাকরাশী বাজারটি বিলীন হয়ে গেলে গণেশ মোদকের দুই ছেলে ধীরেন মোদক ও লোকনাথ মোদক এনায়েতপুরের বাঁশতলা বাজারে মিষ্টির দোকান দেন।

 

দোকানের নাম ‘ভোলানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার’। প্রায় ৫০ বছর ধরে পানতোয়াসহ নানা পদের মিষ্টি বানান তারা। ধীরেন মোদকের ছেলে মহাদেব মোদক ও লোকনাথ মোদকের ছেলে চিত্ত মোদক অবশ্য সম্প্রতি একই নামে দুটি দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন।

 

কথা হয় দোকানের মালিক মহাদেব মোদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, বংশ পরম্পরায় দাদু-বাবার ব্যবসা আমরা ধরে রেখেছি। তবে ব্যবসা আগের মতো হচ্ছে না। আমাদের দেখে অনেকেই এই পানতোয়া মিষ্টি তৈরি করছে। তাদের দোকান সদরে হওয়ায় আমাদের এখানে ক্রেতা না এসে সেখান থেকেই পানতোয়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

 

মিষ্টি ব্যবসায়ী চিত্ত মোদক জানান, বর্তমানে চিনি ও দুধের দাম বেশি। এ কারণে খরচ বেড়েছে। যে কারণে পানতোয়ার দামও বেশি নিতে হচ্ছে। ৮০ গ্রাম ওজনের একটি পানতোয়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পানতোয়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।

 

এনায়েতপুর কেজির মোড় এলাকার রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক রঞ্জিত ঘোষ বলেন, এক সময় স্থলপাকরাশী বাজারে পানতোয়ার দোকানের সামনে নিজেদের তৈরি ঘোল বিক্রি করতেন তিনি। তখন থেকে তার আশা ছিল মিষ্টির দোকান দেয়ার। সেই আশা থেকে তিনি ৫০ বছর ধরে নিজের দোকানে পানতোয়া, রসগোল্লা, রসমালাই তৈরি করছেন।

 

এসব মিষ্টির কারিগররা জানান, প্রতিদিন সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে দুই থেকে আড়াই মণ কাঁচা দুধ সংগ্রহ করে কাঠের চুলায় জ্বাল দিয়ে দুধ ঠান্ডা করা হয়। আগে রেখে দেয়া ছানার পানির সহায়তায় ঠান্ডা হওয়া দুধের ছানা কাটা হয়। এরপর কাপড়ের মাধ্যমে দুধের পানি থেকে ছানা আলাদা করা হয়।

 

পানি ঝরে গেলে ছানা কিছুটা ঝরঝরে হয়ে ওঠে। এরপর সেই ছানা দিয়ে বড় পটোলের মতো করে তৈরি করে ঘিয়ে ভাজা হয়। সেখান থেকে তুলে ছেড়ে দেয়া হয় পানি ও চিনির তৈরি পাতলা শিরায়। এভাবেই তৈরি হয় নরম আর সুস্বাদু পানতোয়া।

 

ক্রেতা লিয়াকত আলী পানতোয়া মিষ্টির প্রশংসা করে বলেন, এনায়েতপুরের বাঁশতলা এলাকার পানতোয়ার স্বাদ এখনো আগের মতোই আছে। যে কারণে মাঝে মধ্যেই কিনে বাড়িতে নিয়ে যাই।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version