-->

সমুদ্রের বুকে দেশের বড় রানওয়ে সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে ওঠানামা করবে বিমান

কক্সবাজার প্রতিনিধি
সমুদ্রের বুকে দেশের বড় রানওয়ে
সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে ওঠানামা করবে বিমান
কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে নির্মাণাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রানওয়ে

সাগরের বুক চিরে আকাশ পানে ছুটে চলা। উত্তাল সাগরকে বশে এনে এমন কর্মযজ্ঞ আগে দেখেনি বাংলাদেশ, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক মাসের। প্রস্তুত দেশের সবচেয়ে বড় রানওয়ে, এরপরই সমুদ্র ছুঁয়েই ওঠানামা করবে উড়োজাহাজ। অবতরণের সময় যাত্রীদের মনে হবে যেন সাগরেই নামতে যাচ্ছেন তারা। এমন ব্যতিক্রমী অনুভূতি দেয়ার পাশাপাশি কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর তালিকায় স্থান পেতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ প্রায় শেষ। আর এই রানওয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হলেই এটি হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রানওয়ে।

 

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চীনা প্রতিষ্ঠান বলছে, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নির্ধারিত মেয়াদেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আর এ বছরের মধ্যেই সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে বিমান ওঠানামা করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটি আরো জানিয়েছে, নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করবে তারা, যা বাস্তবায়নে তাদের কর্মযজ্ঞ পুরোদমে চলছে।

 

কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক লি গুয়াংচি বলেন, ‘সমুদ্রের বুকে রানওয়ে প্রকল্পের কাজটা সহজ ছিল না। ২০২১ সালে কাজ শুরুর পর থেকে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশেষ করে করোনাকাল, এরপর শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর উত্তাল সাগরকে বশে আনাসহ নানা জটিলতা। সবকিছু মোকাবিলা করে রানওয়ের সম্প্রসারণকাজ চলমান। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে সমুদ্রের বুকে রানওয়ে। আরো কিছু কাজ রয়েছে, যা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে শেষ করা হবে।’

 

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুধু সূর্যের আলোতে আকাশপথে কক্সবাজার যাওয়ার দিন শেষ হচ্ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাতেও যাত্রী নিয়ে উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়ন করবে। এতদিন বিমানবন্দরটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য কম ও অন্যান্য অবকাঠামো অনুন্নত থাকায় সব ধরনের বিমান চলাচল করতে পারত না। তাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবিচ্ছিন্ন সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটকদের ঢাকা হয়ে কক্সবাজার যেতে হয়। ফলে নানারকম ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের।’

 

এসব ভোগান্তি দূর করার জন্য রানওয়ে এবং টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে ২০১২ সালে একটি মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জায়গা না থাকায় রানওয়ে সম্প্রসারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা থেকে সৈকতের ভেতরেই রানওয়ে করার সিদ্ধান্ত হয়।

 

নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ২০২১ সালে শুরু হয় বিশাল কর্মযজ্ঞ। যার জন্য প্রথমে সমুদ্রের তলদেশে ব্লক নির্মাণ করা হয়। বিশাল ঢেউ থেকে সুরক্ষা দিতে কংক্রিট ফেলে গড়ে তোলা হয় বাঁধ। তারপর সেটির ভেতরে বানানো হচ্ছে স্থাপনা। দেশে এই প্রক্রিয়ায় এবারই প্রথম কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

কক্সবাজারের মানুষজন বলছেন, এ শহরের পর্যটনে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে এ রানওয়ে। হয়তো দিনের আলোয় নয়, এখন আকাশপথে রাতেও আসা যাবে পর্যটন শহরে।কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলমান। এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার পর দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজারে সহজে যাতায়াতসহ নানাবিদ পর্যটন সুবিধা পাবেন।’

 

এদিকে গত সোমবার দুপুরে কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে যান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। ঘণ্টাব্যাপী তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

 

এ সময় এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘সাগরের পানি নিষ্কাশন করে জমি ভরাটের মতো চ্যালেঞ্জ, করোনার দুর্যোগ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধÑ সব বাধা পেরিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। এখন ভবনের ভেতর ইমিগ্রেশন, বোর্ডিং পাস, লাউঞ্জের কাজ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯০ শতাংশের বেশি। আশা করছি, চলতি বছরের মধ্যেই সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে নির্মিত রানওয়ে দিয়ে বিমান ওঠানামা করবে।’

 

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২.৭৪ কিলোমিটার। সম্প্রসারণ কার্যক্রম শেষে আধা কিলোমিটার বেড়ে নতুন দৈর্ঘ্য হবে ৩.২ কিলোমিটার। দৃষ্টিনন্দন এ রানওয়েটি হবে উপমহাদেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সমুদ্র শাসন করে তৈরি করা প্রথম রানওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রানওয়ে সম্প্রসারণ হলে এই বিমানবন্দরে বোয়িং-৭৭৭ ও বোয়িং-৭৪৭ মডেলের সুপরিসর উড়োজাহাজও ওঠানামা করতে পারবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version