অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিবার শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় ৪৬ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুড়িগ্রামের মোছা. রহিমা বেগম নামের এক নারী। তিনি পেশায় একজন ভাতাপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে কর্মরত আছেন। তার বাবার নাম মো. আছর উদ্দিন। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার খলিলগঞ্জ নাজিরা পাড়া গ্রামের মো. আব্দুল জলিল সরকার মজনুর স্ত্রী।
২৮ জুলাই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি মহিউস সুন্নাত মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৩.৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রহিমা বেগম চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে আর এগুতে পারেননি। সংসারে এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে। ছেলে মেয়ে দুজন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছে। মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের ঘরে এক ছেলে আছে। দীর্ঘ বছর পর মেয়ের ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে পড়াশোনায় আবার উজ্জীবিত হন তিনি। সবশেষে কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ি মহিউস সুন্নাত মহিলা মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় দিয়ে জিপিএ-৩.৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।
এ বয়সে পাশ করায় পরিবার আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীদের অভিনন্দন এবং ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছেন রহিমা বেগম।
মোছা. রহিমা বেগম বলেন, আমি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের একজন কর্মচারী। আমি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছি। এবার আমার স্বপ্ন আমি ইন্টারমেডিয়েটও পড়ব। আমার এসএসসি পাশ করার পেছনে আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের একমাত্র অবদান রয়েছে। স্যার আমাকে সব সময় উৎসাহিত করত পড়াশোনা করার জন্য। এ কারণেই আমি এসএসসিটা পাশ করতে পেরেছি। আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই কলেজে কাজ করছি। স্যাররা আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমিও আমার কাজ সবসময় মনোযোগ দিয়ে করি। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলেমেয়েরা দুজনেই এই কলেজ থেকেই মাস্টার্স পাশ করেছে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন বলেন, রহিমা বেগম আমার কলেজের একজন ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারী। তিনি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মাদরাসায় দাখিল শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ বছর এসএসসি-সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৩.৬০ অর্জন করেছেন। বয়স বা কোনো বাঁধাই তাকে আটকাতে পারেনি। পড়াশোনায় মাঝপথে কিংবা শুরুতে থেমে যাওয়া অন্য সব মহিলা/পুরুষদের জন্য রহিমা একটি প্রেরণার উৎস। যেকোনো বয়সেই যে শিক্ষা অর্জন করা যায় রহিমা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তিনি আরো বলেন, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রহিমাকে অভিনন্দন এবং সে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য