-->
শিরোনাম

পাটের ফলন ও দামে খুশি কৃষক, খরায় জাগ জটিলতা

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
পাটের ফলন ও দামে খুশি কৃষক, খরায় জাগ জটিলতা
ক্যাপশন- জমি থেকে পাট কাটছে কয়েকজন কৃষক

বিস্তৃত ফসলের মাঠে গান গাইতে গাইতে পাট কাটছেন কৃষি শ্রমিক। অনেকে আবার জমি থেকে কাটা পাট পুকুর ও নদীতে জাগ দিতে ব্যস্ত। এমন চিত্রের দেখা পাওয়া যাবে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায়। চলতি মৌসুমে সোনালী আঁশ পাটের ভালো ফলন হওয়ায় খুশি কৃষক। পাশাপাশি বাজারে পাটের দাম হাসি ফুটিয়েছে কৃষকের মুখে।

 

শুধু পাট নয়, পাটখড়ি উন্মোচিত করেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। এ খড়ি দিয়ে তৈরি হচ্ছে চারকোল। যা রান্নার কাজে জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। চারকোল তৈরির বিভিন্ন কোম্পানি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাটখড়ি সংগ্রহ করছে।

 

এমনই এক পাট চাষি লিটন মিয়া। পৌর এলাকার ঘাটপাড়ায় নদীর ধারে ৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি। গত এক সপ্তাহ যাবৎ ছয়জন কৃষি শ্রমিক তার জমিতে পাট কাটছে। বিঘাপ্রতি তার জমি থেকে ৮ থেকে ১০ মণ পাট সংগ্রহ করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা চাষি লিটনের।

 

সে অনুযায়ী তার ৮ বিঘা জমি থেকে ৮০ থেকে ১০০ মণ পাট পাওয়া যাবে। পাটের বীজ ছিটানো থেকে শুরু করে জমি থেকে পাট কাটা পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এরপর এসব পাট জাগ দেয়া এবং পাট সংগ্রহ করা পর্যন্ত তার আরো প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে ঘোড়াঘাট উপজেলায় পাটের চাষ হয়েছে ১২০ হেক্টর জমিতে। তবে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩০ হেক্টর। এসব জমি থেকে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ১ হাজার ৪০ মণ। এ উপজেলার বুলাকীপুর ও পালশা ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকায় পাটের চাষ বেশি হচ্ছে।

 

স্থানীয় বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে পাট কেনাবেচা হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এসব বাজার থেকে ছোট ব্যবসায়ীরা পাট সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলার বড় মোকাম এবং পাট কারখানাতে বিক্রি করে।

 

তবে পাটের ফলন ও দাম ভালো হলেও পাট জাগ দেয়া নিয়ে বিরম্বনায় চাষিরা। বর্ষা মৌসুমে তীব্র খরায় কমে গেছে পুকুর, খালবিল ও নদীর পানি। এতে জাগ দেয়া নিয়ে কঠিন দুশ্চিন্তায় চাষি। পাট কেটে অনেকে জমিতে ও পুকুর পাড়ে ফেলে রেখেছে। এতে শুকিয়ে যাচ্ছে পাটের গাছ।

 

পাট চাষি লিটন মিয়া বলেন, ‘পাট চাষে পরিশ্রম কম এবং লাভ বেশি। আমার ৮ বিঘা জমি থেকে ১০০ মণ পাট পাব বলে আশা করছি। বাজারে দামও ভালো। সব মিলিয়ে আমর ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হবে। আবার পাটখড়িও বিক্রি করব। খড়ি থেকেই আমার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আসবে।’

 

বলগাড়ী গ্রামের পাট চাষি এন্তাজ আলী বলেন, ‘পাট কাটছি। কিন্তু জাগ দিতে পারছি না। গতবার যেই পুকুরে পাট জাগ দিয়েছিলাম। সেই পুকুর এবার খরায় পানিশূন্য হয়ে আছে। কঠিন একটা চিন্তায় পড়ে আছি। কেটে রাখা পাটের গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে।’

 

ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজাজামান বলেন, ‘পাট রপ্তানি করে আমরা প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি। আমরা প্রতিনিয়ত কৃষককে পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। বিদেশে পাটের ব্যাপক চাহিদা আছে। সরকার ও কৃষি বিভাগ পাটের চাষ বাড়াতে নানা ধরণের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছে।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version