-->
শিরোনাম

হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী মালঞ্চ নদী

ফরিদপুর প্রতিনিধি
হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী মালঞ্চ নদী
ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী মালঞ্চ নদী এখন রূপলাবণ্য হারিয়েছে

নদীমাতৃক বাংলাদেশের মধ্যবর্তী ফরিদপুর জেলা গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান নদী পদ্মার অববাহিকায়। আর এই জেলা শহরের কোলজুড়ে বয়ে চলা কুমার নদ পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলার বাজার অতিক্রমকালে সৃষ্টি হয়েছে এর একটি শাখা নদী যার নাম মালঞ্চ। সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবনে ও রাজশাহীতে মালঞ্চ নামে পৃথক দুটি নদী রয়েছে। তবে সেসব নদীর মতো সুদীর্ঘ না হলেও ফরিদপুরের মালঞ্চ নদীর রয়েছে কয়েকশ বছরের প্রাচীন ইতিহাস।

 

ফরিদপুরের মালঞ্চ নদী সালথা উপজেলার গট্টিবাজারে কুমার নদ থেকে উৎপত্তি লাভ করে সিংহপ্রতাপ, গৌড়দিয়া, সলিয়া, সেনহাটি, খাগৈড়, গোয়ালপাড়া, গোবিন্দপুর ও দুর্গাপুর এই আটটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। বিভিন্ন জনপদ ও গ্রাম ছাপিয়ে নদীটি ১২ কিলোমিটার পথপাড়ি দিয়ে আবারো কুমার নদের সাথে মিশেছে।

 

এজন্য অনেকে এটিকে কুমার নদের অংশ বলে মনে করে। মাত্র ৩০ থেকে ৪০ বছর আগেও মালঞ্চ নদী ছিল নানা জাতের দেশীয় মাছের সম্ভারে পরিপূর্ণ। স্থানীয়রা সেই মাছ শুঁটকি বানিয়ে সারাবছরের খাদ্যসংস্থানের জন্য রেখে দিতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে অনেককিছুর সাথে মালঞ্চ নদীও তার আগের রূপলাবণ্য হারিয়েছে।

 

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, নদীর এমন সুন্দর একটি নামই হারাতে চলেছে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না, এই নদীর নাম মালঞ্চ। ফরিদপুরের সরকারি-বেসরকারি নথিপত্রে কোথাও মালঞ্চ নদীর কোনো অস্তিত্বের বিবরণ নেই।

 

স্থানীয়রা জানান, শুকনো মৌসুমে খড়ায় পানি শুকিয়ে জেগে উঠে মালঞ্চ নদীর উদোম শরীর। নদীটি স¤প্রতি খনন করা হয়েছে। এখন শুকনো মৌসুমে হাঁটু পানি থাকে কোথাও। আবার বর্ষায় পানিতে ভরে উঠে নদীর বুক। এ মৌসুমে ফরিদপুরের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট জাগ দেয়া হয় এ নদীতে। পাটের পচা পানি নিয়েই বয়ে চলে নদী। এমন সুন্দর স্নিগ্ধতা জড়ানো এই নদী যেন সবার অগোচরে হারিয়ে যাচ্ছে।

 

মালঞ্চ নদীর নামকরণের সাথে মিশে রয়েছে এক করুণ শোকগাঁথা। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক সূধীর দত্ত ওরফে উত্তম জানান, নবাবী আমলে সালথায় বড় জমিদার ছিলেন প্রতাপ সিংহ। তার মেয়ে যার নাম ছিল মালঞ্চ। এই নদীতে নৌকায় বাড়ি ফেরার সময় সে নৌকাডুবিতে মারা গেলে তার নাম অনুসারেই এই নদীর নাম হয় মালঞ্চ।

 

ফরিদপুরের সাংবাদিক ও সালথার বাসিন্দা শ্রাবণ হাসান বলেন, এমন একটি সুন্দর নামের নয়নাভিরাম নদী রয়েছে আমাদের সালথায় অথচ তেমনভাবে কখনো জানা হয়ে উঠেনি। নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই এ নদীর নাম জানে না।

 

স্থানীয়দের মতে, নদীমাতৃক বাংলাদেশে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে আরো অনেক নদনদীর মতো মালঞ্চ নদীর রূপলাবণ্য ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের একটি অপরিহার্য দাবি হয়ে উঠেছে।

 

এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, এ নদীর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সাংবাদিকদের মাধ্যমেই প্রথম জানতে পারলাম। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখব। আর যদি সরকারি নথিপত্রে এই নদীর নাম ও তথ্য না থাকে তাহলে তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা এ ব্যাপারে বলেন, মালঞ্চ নদী সম্মন্ধে সেভাবে জানা নেই। আমরা সারা দেশের নদীর তথ্য হালনাগাদ করছি। যদি এটি নদীর শ্রেণিভুক্ত হয় তাহলে অবশ্যই নদনদীর তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলব।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version