-->
শিরোনাম

পাট জাগ দেয়া নিয়ে চরম দুর্ভোগ, দুশ্চিন্তায় কৃষক

নিত্যানন্দ হালদার, মাদারীপুর
পাট জাগ দেয়া নিয়ে চরম দুর্ভোগ, দুশ্চিন্তায় কৃষক
মাদারীপুরে পাট কাটায় ব্যস্ত কৃষক

অনুকূল আবহাওয়ায় চলতি বছর মাদারীপুরে পাটের বাম্পার ফলন হলেও পানির অভাবে পাট পচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষিরা। অন্যান্য বছর শ্রাবণ মাসে বর্ষার পানিতে ডোবা নালা খাল বিল পানিতে ভরপুর থাকলেও জনগণ পানির দেখা পাচ্ছে না। খাল-বিল ও পানি যাও ছিল তা দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় পাট জাগ দেয়া নিয়ে চাষিদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

 

পানির সংকট দেখা দেয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়ে পুকুর ও ডোবা ভরে পাট পচানোর চিন্তাভাবনা করছেন। আবার অনেকে চরাঞ্চল থেকে টমটম ও অটো ভ্যানে করে ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরে বিলের পানিতে পাট জাগ বা পচানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।

 

অনেক পাট ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডোবা নালার সামান্য পানিতে পাট জাগ দেয়ায় পাটের রং কালচে হয়ে যাওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছে না চাষিরা। বর্তমানে মাদারীপুরে পাট কাটা, জাগ দেয়া ও আঁশ ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। টমটম ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে দূর-দূরান্তে নিয়ে পাট জাগ দেয়ায় চাষিদের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যাওয়ায় পাটের ন্যায্য মূল্য বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

 

অন্য বছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের মধ্যে পাট কাটা, পচানো, আশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ শেষ হলেও এ বছর শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পার হতে চললেও পাট পচানোর জন্য পানি না পাওয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখনো কাটতে বাকি রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর জমির পাট। জমিতে পাট মরে যাচ্ছে। পাট কাটতে বদলা পাওয়া যাচ্ছে না। বদলার দাম বেশি। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ডোবা নালায় পাট জাগ দেয়ায় পাটের আগা ও গোড়া কাঁচা থাকছে। পাটের রং কালচে হয়ে যাচ্ছে। চাষিরা পাটের ভালো দাম পাচ্ছে না।

 

মাদারীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় চলতি বছর মাদারীপুর জেলায় দেশি, তোষা ও মেস্তা জাতের পাটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৮০৮ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩৭ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে।

 

চলতি বছর মাদারীপুরে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছর ৭৭ হাজার ৮২৮ টন পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। কৃষকরা বর্তমানে জমি থেকে পাট কাটা, পানিতে জাগ দেয়া ও পাটের আঁশ ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

 

মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের উত্তর বিরঙ্গল গ্রামের মো. সেলিম বেপারী জানান, ৬৩ শতাংশের ৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। পাট খুবই ভালো হয়েছে। বিগত ৪-৫ বছরের তুলনায় এ বছর পাট ভালো হয়েছে। বাড়ির নিকটস্থ আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় পাট পচাতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের লখন্ডার বিলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।

 

একই ইউনিয়নের উত্তর বিরঙ্গল গ্রামের গোপাল ভক্ত জানান, তিনি এ বছর ৬৩ শতাংশের ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এক বিঘা জমির পাট কেটে জাগ দিয়েছেন। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় এখনো ৩ বিঘা জমির পাট জমিতে রয়ে গেছে। পানির অভাবে পাটের মানও ভালো হচ্ছে না। এতে পাটের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

 

মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের অরবিন্দ হালদার জানান, এ বছর পাট ভালো হয়েছিল। কিন্তু পানির অভাবে পাট পচাতে পারছি না। পাটের রং কালা হয়ে যাচ্ছে। এতে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। অর্ধেক পাট এখনো জমিতে কাটতে বাকি রয়ে গেছে। পাট উৎপাদনে খরচ হচ্ছে অনেক টাকা। পাটের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার দাবি জানান তিনি।

 

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সন্তোষ চন্দ্র চন্দ জানান, উন্নত পাটের আশ উৎপাদনে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও কারিগরি পরামর্শ দেয়া হয়েছে কৃষি বিভাগ থেকে।

 

পাট পচানোর জন্য যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত বা পানির প্রয়োজন ছিল সেটি চাষিরা পায় নাই বিধায় অন্যত্র নিয়ে জাগ দিতে হয়েছে বলে খরচটা একটু বেশি হয়েছে। বর্তমানে বাজারে পাটের দাম কিছুটা কম হলেও কিছুদিন পরে বাজারে পাটের ভালো দাম পাবে বলে মনে করেন তিনি। আগামীতে পাটের আবাদ বাড়বে বলে আশাবাদ মাদারীপুরের এই কৃষি কর্মকর্তার।

 

মাদারীপুর সদর, কালকিনি, ডাসার ও শিবচর উপজেলায় ৩৭ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমিতে চলতি বছর পাটের আবাদ হয়েছে যা থেকে ৭৭ হাজার ৮২৮ টন পাট উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version