-->
শিরোনাম

সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক এখন মরণফাঁদ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক এখন মরণফাঁদ
সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে সারি সারি দাঁড়িয়ে কঙ্কালসার গাছগুলো

মাইলের পর মাইল সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে কয়েকশ কঙ্কালসার গাছ। হালকা বাতাসে প্রাণহীন গাছের শুকনো ডালগুলো হুটহাট ভেঙে পড়ে রাস্তায়। ফলে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের বড় একটি অংশ এখন এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গাছের শাখা-প্রশাখা ভেঙে গায়ে পড়ার এক আতঙ্ক মাথায় নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। কেবল আতঙ্ক নয়, মরা এসব গাছের ডাল ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনাও ঘটেছে কয়েকবার। দিনে দিনে প্রাণহানির ঝুঁকি বেড়েই চলছে।

 

সম্প্রতি মরা গাছের ডাল ভেঙে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের মেল্লেকপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল খলিল হাজীর ছেলে ফারুক হোসেন। ভেঙে গেছে ফারুক হোসেনের মেরুদন্ডের হাড়। গেল ঈদুল আজহার দিন সন্ধ্যায় আশাশুনি থেকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের কোমরপুরে একটি মরা শিশু গাছের (রেইন ট্রি) ডাল ডেঙে গায়ে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার মোটরসাইকেলটিও।

 

সরেজমিনে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের সাতক্ষীরা আলিয়া মাদ্রাসা মোড় থেকে যতনমালী মোড় পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই ধারে সারি সারি মরা গাছের কঙ্কালসার দাঁড়িয়ে আছে। যা ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে প্রকৃতির নিয়মে। আর ভয়টা সেখানেই। এসব মরা গাছের ডাল আকস্মিকভাবেই ভেঙে পড়ে সড়কের ওপর।

 

ধুলিহর-ব্রহ্মরাজপুর এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান শিমুল জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে এই সড়কের দুপাশে শিশু (রেইন ট্রি) গাছ রোপণ করে জেলা পরিষদ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। বছরখানেক আগে সড়কটির বেশকিছু স্থানের গাছ শুকিয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে শত শত গাছ মারা যায়। সামান্য ঝড় বৃষ্টিতেই গাছের ডাল ভেঙে পড়ে।

 

অনেক সময় সাইকেল, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ অন্যান্য যানবাহনে চলাচলকারী ও পথচারীরাও দুর্ঘটনার শিকার হন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট দের বলছি গাছগুলো অপসারণ করতে, কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি। হয়তো কর্তৃপক্ষ জীবনহানির অপেক্ষা করছে।

 

স্থানীয়রা জানান, গাছগুলোর বয়স অনেক। রোগ বা পোকার আক্রমণে গাছগুলো মারা যাচ্ছে। ডাল ভেঙে পড়ে চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। একটু বাতাস হলেই ডাল ভেঙে সড়কের ওপর পড়ে।

 

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দীন বলেন, গাছগুলো এখন মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি জেলা পরিষদকে জানানো হয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদ দেখছি বা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপণ করলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে জানান তিনি।

 

এদিকে সাতক্ষীরা সামাজিক বন বিভাগ জানিয়েছে, গাছগুলো মারা যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে চিঠি দেয়া হয়। সেখানকার একটি টিম এসে কাঠ ও পোকার নমুনা নিয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ‘লাখ্যা’ নামের এক ধরনের পোকার আক্রমণে গাছগুলো মারা যাচ্ছে। রিপোর্ট এলে সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ছাড়া লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়াও গাছগুলো মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ।

 

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে দুজনের কেউই ফোন রিসিভ করেননি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version