কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে টানা খড়া, অনাবৃষ্টির সঙ্গে তীব্র তাপপ্রবাহ। শুকিয়ে গেছে ফসলি জমির মাঠের পর মাঠ। বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে এসেও বৃষ্টির জন্য হাহাকার চারিদিকে। রোপণ করা আমনের জমিতে পানি না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে প্রান্তিক কৃষকরা। আবার অনেকে সেচের পানি দিয়ে আমন রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে।
কুড়িগ্রাম সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে রোপা আমন ধান লাগানোর সময়। কারণ এ সময়ে বৃষ্টির পানি ও বন্যার পানি জমিতে থাকে। কিন্তু এ বছর একেবারে ভিন্ন চিত্র। অনাবৃষ্টির কারণে পানি সংকট দেখা দিয়েছে কৃষি জমিতে। কেউ কেউ সেচ পাম্প দিয়ে পানি সেচ করে বীজতলা তৈরি করছে।
কারণ বীজ তলা তৈরি হওয়া চারা ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জমিতে লাগানো হয় তবে অনেক কৃষকের আমন চারার বয়স বেড়ে গেলেও জমিতে পানি না থাকায় আমন চারা রোপণ করতে পারছে না। পানি সংকটে অনেক রোপণকৃত আমন চারা বিবর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে। আবার তীব্র রোদে জেলার বিভিন্ন এলাকায় জমি ফেটে চৌচির হয়েছে। অনেকই সেচের পানিতে আমন চারা রোপণ করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৮০ হাজার হেক্টর।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার ছবরুল মিয়া বলেন, তিনি ২ বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করবেন বলে ঠিক করেছেন, কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এখনো তিনি চারা রোপণ এবং জমি প্রস্তুত করতে পারেন নি। এর মধ্যে বৃষ্টি না হলে সেচের পানি দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে।
ওই এলাকার সামছুল আলম বলেন, বৃষ্টি না থাকার কারণে এখনো আমন ধানের চারা লাগাতে পারি নাই। বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি ২-১ দিন মধ্যে বৃষ্টি হলে, জমি প্রস্তুত করব। তিনি জানান, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার আবহাওয়াটা অনেক খারাপ। এবার যে গরম যাচ্ছে আমার জীবনে এতো গরম পাই নাই। গরম পড়ছে ঠিক আছে সে হিসেবে আবার বৃষ্টির দেখাও নাই।
চিলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষাণ দাস বলেন, বর্তমান সময় আমন ধান রোপণের ভরা মৌসুম চলছে। কিন্তু প্রয়োজন মাফিক বৃষ্টি না থাকায় কৃষকরা বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তাছাড়া বন্যাপ্রবণ চিলমারী উপজেলায় একটু দেরিতেই আমনের আবাদ শুরু হয়।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুহিন মিয়া জানান, সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টা পূর্বাভাসে বলা হয়েছে রংপুর অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা-ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, জেলায় আমন রোপণের কাজ চলমান। ইতোমধ্যে জেলায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য